১৮৫৫ সালের ৩০ শে জুন থেকে ১৮৫৬ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত সংগঠিত হওয়া সাঁওতাল বিদ্রোহের ইত্যিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম।
মানুষকে পরাধীন করে রেখে তার ওপর অত্যাচার চালালে একদিন সে স্বাধীনতার জন্যে সংগ্রাম করবেই। এমনটিই হয়েছিল সাঁওতাল আদিবাসীদের ক্ষেত্রে। তারা ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। ইংরেজ শাসন আর শোষণের হাত থেকে রেহাই পেয়ে স্বাধীন হতে চেয়েছিল। তাই তারা বিদ্রোহ করেছিল ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে।
শুধু সাঁওতাল উপজাতির নয়, তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল কর্মকার, তেলি, চর্মকার, ডোম এবং দরিত্র মুসলমান। সারা সাঁওতাল পরগনা ও তার লাগোয়া জেলাগুলিতে জুড়ে ঘটা এই বিদ্রোহের একটাই উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনতা লাভ।
সাঁওতাল বিদ্রোহ
সময় কাল | ১৮৫৫ থেকে ১৮৫৬ খ্রিষ্টাব্দ |
বিদ্রোহের এলাকা | সাঁওতাল পরগনা, বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, মেদিনীপুর, মুর্শিদাবাদ, পাকুড়, দুমকা, ভাগলপুর, পূর্ণিয়া |
নেতৃত্ব বৃন্দ | সিধু, কানু, ও চাঁদ, ভৈরব |
ফলাফল | ব্যর্থতা |
সাঁওতাল বিদ্রোহ কি
বিহারের ভাগলপুর জেলার অন্তর্গত দামিন-ই-কোহ অঞ্চল থেকে বীরভূম পর্যন্ত বিস্তৃত সাঁওতাল ভাষাভাষী ও কৃষি নির্ভর জনগোষ্ঠী ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে যে বিদ্রোহ গড়ে তোলে তাকে হুল বা সাঁওতাল বিদ্রোহ বলা হয়।
সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণ
সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণগুলি হল-
সহজ সরল সাঁওতাল
দুর্গম বন-জঙ্গল আর পাহাড় ঘেরা সাঁওতাল পরগনায় ছিল সাঁওতালদের বহুদিনের বাস। সাঁওতাল পরগনা সহ বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, মেদিনীপুর, মুর্শিদাবাদের কিছু অংশ, পাকুড়, দুমকা, ভাগলপুর, পূর্ণিয়া প্রভৃতি জেলায় ছিল গভীর বন জঙ্গল। এই অঞ্চলগুলিতে সাঁওতালদের ছিল বাসভূমি। শিকার, জঙ্গলের ফল মধু সংগ্রহ করা ছাড়াও তারা এই সব অঞ্চলের পতিত জমি গুলিতে কৃষিকাজ করত। তাদের কাছে প্রকৃতি ছিল মায়ের মত, প্রকৃতির কোলেই এরা মানুষ হয়েছে। প্রকৃতির মতই এরা ছিল সরল। তাই সহজ সরল অদিবাসীদের ঠকানো ছিল অনেক সহজ।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের পর ব্রিটিশ কোম্পানি ১৮৩২ সালে রাজমহল পাহাড়ি এলাকা দামিন-ই-কোহ হিসাবে চিহ্নিত করে। এই অঞ্চল সাঁওতালরা কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে চাষযোগ্য করে তুলেছিল। কিন্তু অচিরেই বহিরাগতরা এই অঞ্চল অধিকার করে ফেলে। ফলে ধীরে ধীরে সাঁওতালরা অর্থনৈতিক শোষণের শিকার হতে থাকে।
রাজস্ব কর
দামিন-ই-কোহ এলাকাটি কোম্পানি নিজস্ব ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থায় নিয়ে আসার পর রাজস্ব কর ক্রমে বাড়তে থাকে।
মহাজন ব্যবসায়ীদের প্রতারণা
আস্তে আস্তে এই সব এলাকায় ইংরেজ বণিকদের সাথে পাঞ্জাবী আর ভাটিয়া মহাজন, বেনিয়ারা, বহিরাগত জোতদারেরা এসে ভিড় জমাতে শুরু করে। তারা সাঁওতালদের কাছ থেকে নামমাত্র দাম দিয়ে ফসল কিনতে লাগলো। সে সব চালান দিয়ে সব তারা প্রচুর টাকা উপার্জন করতে লাগল।
সাঁওতালদের কাছ থেকে কেনাবেচা করার সময় এরা দু ধরনের বাটখারা ব্যবহার করত।
ফসল ও জিনিসপত্র কেনার সময় এরা অপেক্ষাকৃত ভারী বাটখারা কেনারাম আর জিনিসপত্র দেওয়ার সময় অপেক্ষাকৃত হালকা বেচারাম বাটখারা ব্যবহার করত।
চক্রবৃদ্ধি-হার সুদের হার
মহাজনদের কাছ থেকে নেওয়া ধার চক্রবৃদ্ধি-হার সুদের হারে এমন অবস্থা দাঁড়াতে যে তাদের সারা বছরের ফসল সহ চাষের জমি, হাল-বলদ সব চলে যেত মহাজন, বেনিয়াদের খপ্পরে।
সাঁওতালরা যখন ঋণ গ্রহণ করত তাদেরকে দুই ধরনের চুক্তির সাথে যুক্ত করে দেওয়া হত।
১) কামিয়াতি
এই চুক্তি অনুযায়ী ঋণগ্রহীতা তার ধার শোধ না হওয়া পর্যন্ত মহাজনের মাঠে কাজ করে দিতে হত।
২) হারওয়ারি প্রথা
এই চুক্তি অনুযায়ী ঋণগ্রাহীতা মহাজনের নিকট শ্রমদান করতে হতো। তার জন্য সামান্য পরিমাণ মজুরি পেত।
অধিকাংশ সাঁওতালরা শেষ পর্যন্ত ঋণের দায়ে দাস, ভূমিদাস, ক্রীতদাসে পরিণত হয়েছিল।
রেলপথ নির্মাণের কাজে
পার্শ্ববর্তী রেলপথ নির্মাণের কাজে সাঁওতালদের জোর করে কাজে লাগানো হতো। মজুরি দেওয়া হতো খুবই কম। তাছাড়া রেল ঠিকাদারেরা ও পেয়াদেদার, লেঠেল বাহিনী মাঝে মাঝেই সাঁওতাল পল্লীগুলিতে ঢুকে লুটপাট ও অত্যাচার চালাত।
পক্ষপাত দুষ্টু আইন
সাঁওতালদের উপর ঘটে চলা এই অত্যাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে কোন আইনি ব্যবস্থা ছিল না। বেশিরভাগ সাঁওতালরা ছিল অশিক্ষিত তাই তাদের পক্ষে বিচারব্যবস্থা সুবিধা নেওবার মতো বুদ্ধি ছিল না। ইংরেজদের গড়ে তোলা সেই আইনি ব্যবস্থাও ছিল পক্ষপাত দুষ্টু।
খ্রিস্ট ধর্মে দীক্ষিত করার প্রচেষ্টা
খ্রিস্টান মিশনারিগুলো ছলে বলে সাঁওতালদের খ্রিস্ট ধর্মে দীক্ষিত করার প্রচেষ্টা করে যাচ্ছিল।
সাঁওতাল বিদ্রোহের বিস্তার
এই শোষণ আর অত্যাচারের বিরুদ্ধে সাঁওতালরা বিদ্রোহ করল ১৮৫৪ সালে। সাঁওতালী ভাষায় বিদ্রোহের নাম হল ‘হুল‘। সাঁওতাল-হূলে যোগ দিল বঙ্গদেশ আর বিহারের দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষেরা।
বীর সিং মাঝি নামে এক সর্দার এক দল গঠন করে জমিদার মহাজনদের ঘরে ডাকাতি শুরু করে দেয়।
জমিদার-মহাজনের লোকেরা বীরসিংকে ধরে নিয়ে এসে কাছারি বাড়িতে লাঞ্ছিত করে।
সাঁওতাল মহলের সাঁওতালরা তাদের সর্দারকে অপমানিত করায় ক্ষিপ্ত হয়ে অত্যাচারী জমিদার-মহাজনদের বাড়ি আক্রমণ করে লুঠ করতে আরম্ভ করে।
সে সময় জঙ্গল মহলের এক থানার নাম ছিল দিঘি। মহেশলাল দত্ত ছিল দিঘি থানার দারোগা। গোক্কো নামে এক ধনী সাঁওতালকে চুরির মিথ্য৷ অভিযোগে মহেশ দত্ত লাঞ্ছিত ও অপমানিত করে। তবে চুরির কোনো প্রমাণ না পেয়ে দারোগা তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। এই খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তে বেশি সময় নেয় না।
সর্দারদের ওপর উৎপীড়ন হয়েছে, প্রতিশোধ নিতে হবে। বীরভূম, বাঁকুড়া ছোটোনাগপুর, হাজারিবাগ- এসব এলাকা থেকে সাত হাজার সাঁওতাল এসে হাজির হল ‘দামিন’ অঞ্চলে। এই জমায়েত থেকেই দেখা দিল প্রচণ্ড বিদ্রোহ। বিদ্রোহের নায়ক হলেন চারভাই- সিধু, কানু, ও চাঁদ, ভৈরব।
সাঁওতাল পরগনার সদর শহর বারহাইত। সেখান থেকে আধমাইল দূরে ছিল ভাগনাদিহি নামে এক গ্রাম।
১৮৫৫ সালের ৩০শে জুন ভাগনাদিহি গ্রামে সিদু-কানু বক্তৃতা দিলেন। তাঁরা প্রচার করলেন – ঠাকুরের নির্দেশ, সাঁওতাল পরগনা থেকে শোষক-উৎপীড়ককে বিতাড়িত করতে হবে। সাঁওতাল পরগনাকে স্বাধীন করতে হবে।
সেখানে উপস্থিত ছিল চারশ’ গ্রামের প্রায় দশ হাজার প্রতিনিধি। উপস্থিত সবাই প্রতিজ্ঞা করল- জমিদার-মহাজনের, ইংরেজ শাসকের, পুলিশ, পাইক-পেয়াদার, জজ-ম্যাজিস্ট্রেটের অত্যাচার নিপীড়ন আর সহ্য করবে না। তারা কোনো ব্যক্তির দাসত্ব করবে না, সাঁওতালদের স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করবে। অন্যান্য দরিদ্র শ্রেণির মানুষেরাও সাঁওতালদের পাশে দাঁড়ালো।
হাজার হাজার আদিবাসী কলকাতার দিকে অভিযান শুরু করে।
মহেশ দারোগা সিধু, কানুকে বাধা দিতে এলে সাঁওতালরা তাকে বেঁধে ফেলে। পথেই বিচার করে তাকে হত্যা করা হয়।
আরম্ভ হল ‘সাঁওতাল-তুল’।
আত্যাচারী দারোগা ও কুখ্যাত মহাজন কেনারাম ভগৎ নিহত হওয়ার পর তাদের অভিযান চলল- জাতীয় শোভাযাত্রার মতো।
শত শত গ্রাম পুড়ল, ইংরেজদের সাথে জমিদার-মহাজনেরা পালালো ৷ প্রতাপ নারায়ণ নামে অন্য এক দারোগাও নিহত হলেন। ইংরেজ সৈন্য বাহিনী বিভিন্ন জায়গায় পরাজিত হতে লাগে বিদ্রোহীরা প্রচার করে তাদের স্বাধীন সাঁওতাল রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
ভাগলপুরের কমিশনার সামরিক অধিনায়ক মেজর বারোজকে পাঠালেন বিদ্রোহ দমন করতে।
দিনাজপুর, ছোটোনাগপুর, সিংভূম, হাজারিবাগ, মুঙ্গের এসব এলাকা থেকে হাজার হাজার সৈন্য আর যুদ্ধের হাতি নিয়ে আসা হলো।
ভাগলপুর জেলায় পিয়ালাপুরের কাছে পীর পইতির মাঠে পাঁচ ঘণ্টা ধরে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়।
শেষে মেজর বারোজ চূড়ান্তভাবে পরাজিত হয়ে পালিয়ে যান।
আতঙ্কে দিশেহারা বড়লাট লর্ড ডালোহৌসি জারি করেন ‘মার্শাল ল’। অর্থাৎ বিদ্রোহীদের দেখা মাত্র গুলি করার নির্দেশ।
পুরষ্কারও ঘোষণা করা হয় নায়কদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্যে।
বিদ্রোহীরা এবার দলে দলে ভাগ হয়ে আক্রমণ চালাতে লাগে এবং এভাবে বিহারের এক অংশ, বীরভূম, বাঁকুড়া ও মুর্শিদাবাদ জেলার অনেক অংশ বিদ্রোহীদের হাতে চলে আসে।
সাঁওতাল বিদ্রোহীরা ধনী জমিদার, মহাজন, নীল-কুঠি, এদের ধন- সম্পদ লুঠ করে আগুন ধরিয়ে দেয়। নীল কুঠিকে সাঁওতালরা বলত ‘শয়তান ঘাঁটি’। তাদের অস্ত্র ছিল তীর-ধনুক, তরবারি ও টাঙ্গি। বিভিন্ন এলাকায়, বিভিন্ন যুদ্ধে বহু লোক নিহত হয়।
একদিকে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত সরকার বাহিনী অন্যদিকে ঢাল, তরোয়াল, তির ধনুক, কুড়াল পাথর নিয়ে উপজাতিদের দলদের একমাত্র ভরসা ছিল তাদের নেতাদের ভেল্কি শক্তি এবং অদম্য সাহস।
বিদ্রোহীদের দমন করার উদ্দেশ্যে বড়লাট নির্দেশে পূর্বাঞ্চলে যত অশ্বারোহি, পদাতিক বাহিনী, কামান বাহিনী, হস্তী বাহিনী ছিল সব পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
প্রায় পনেরো হাজার সুশিক্ষিত সৈন্য এসে সাঁওতাল পরগনার গ্রামগুলি আক্রমণ করে।
গ্রামের পর গ্রামে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় আর সাঁওতালদের উপর অকথ্য অত্যাচার ও হত্যা করা হয়।
এভাবে যুদ্ধ চলেছিল প্রায় দু’মাস ধরে।
শেষে সরকারি বাহিনীর আক্রমণে বিদ্রোহীরা এবার পিছু হটতে থাকে।
কিন্তু আত্মসমর্থন না করায় বঙ্গদেশের মুর্শিদাবাদ ও বীরভূম থেকে বিহারের ভাগলপুর পর্যন্ত বিরাট অঞ্চলকে তুলে দেওয়া হল সৈন্যবাহিনীর হাতে।
এই ছিল ইংরেজ শাসনের এক চরম অস্ত্র।
এর ফলে কোম্পানির সৈন্যরা ব্যাপক হারে হত্যালীলা, লুণ্ঠন ও ধ্বংস করে যেতে থাকে।
প্রায় ২৫,০০০ সাঁওতাল প্রাণ হারায় ও কয়েক হাজার গ্রাম ধ্বংস হয়ে যায়।
একদিন এক সাঁওতাল বিদ্রোহের সর্বশ্রেষ্ঠ নায়ক সিধুর গোপন বাসস্থান ইংরেজদের জানিয়ে দেয়। ইংরেজরা এই বীর নায়ককে গ্রেপ্তার করার সঙ্গে সঙ্গেই গুলি করে হত্যা করে।
কানু মারা যান বীরভূম জেলায় পুলিশের গুলিতে।
চাঁদ ও ভৈরব যুদ্ধ করতে করতে ভাগলপুরে বীরের মত প্রাণ-বিসর্জন দেন।
এরপর সাঁওতাল বিদ্রোহও ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে আসে।
সাঁওতাল বিদ্রোহের ফলাফল ও গুরুত্ব
এই বিদ্রোহের ফলাফল ও গুরুত্ব ছিল অপরিসীম ও সুদূরপ্রসারী। নিম্নে তা আলোচনা করা হল-
সাঁওতাল পরগনা গঠন
ব্রিটিশ সরকার সাঁওতাল বিদ্রোহকে শেষ পর্যন্ত নিশ্চিহ্ন করতে পারলেও বুঝতে পেরেছিল সাঁওতালদের জন্য একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ড গঠন করা প্রয়োজন।
সেই উদ্দেশ্যে ইংরেজ সরকার সাঁওতাল অধ্যুষিত এলাকা মিলে তৈরি করে নতুন জেলা সাঁওতাল পরগনা।
অধিকারের স্বীকৃতি
ব্রিটিশ সরকার সাঁওতালদের একটি পৃথক জনগোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং সাঁওতালদের বিশেষ অধিকারের দাবিকে মান্যতা দিয়ে ঘোষণা করা হয় সাঁওতাল পরগনা এলাকায় কোন সরকারি আইন কার্যকরী হবে না।
জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে যোগদান
সাঁওতাল বিদ্রোহতে শুধুমাত্র সাঁওতালরা যোগদান করেনি। তাদের সাথে যোগ দিয়েছিল জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে অগুনিত সাধারণ মানুষজন।
এ থেকে ধর্মীয় ঐক্য গড়ে ওঠে তার গুরুত্ব অপরিসীম এবং সুদূরপ্রসারী।
রাজস্ব কর
ব্রিটিশ সরকার একটি স্বতন্ত্র সাঁওতাল পরগনা গঠন করলেও এলাকাগুলিতে ভূমি রাজস্বের হার হ্রাস হয় না।
জমিদার, মহাজন, ব্যবসায়ী শোষণ হ্রাস
ইংরেজ সরকার সরকারিভাবে সাঁওতাল পরগনা এলাকা গুলিতে মহাজন জমিদার ও জোতদারদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে। মহাজনদের মর্জি মাফিক সুদের হ্রাস নির্দিষ্ট হারিয়ে বেঁধে দেওয়া হয়।
ফলে এই এলাকাগুলিতে বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ ও দৌরত্য বহুলাংশে হ্রাস পায়।
খ্রিস্ট ধর্মের প্রসার
সাঁওতালদের আর অনুগত্য ও শিক্ষিত করার অছিলায় ব্রিটিশ সরকার এইসব এলাকাগুলিতে অনেক খ্রিস্টান মিশনারি গড়ে তোলে এবং সাঁওতালদের খ্রিষ্ঠ ধর্মে দীক্ষিত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যায়।
স্বাধীনতা আন্দোলনে উৎসাহ
সাঁওতাল বিদ্রোহ যে দামামা এবং ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র জনমত গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিল তা পরবর্তীকালে নানান বিদ্রোহ ও স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রেরণা জুগিয়েছে।
পরবর্তীকালে সিপাহী বা মহাবিদ্রোহের বীজ বপন হয়েছিল এই বিদ্রোহের মাধ্যমেই।
উপসংহার
বন-জঙ্গলের সাঁওতালরা এদেশের এক উপজাতি। ইংরেজরা তাদের বলেছে—অসভ্য, বন্য।
কিন্তু দেশকে স্বাধীন করার জন্যে যে শিক্ষা তারা দিয়ে গেছে, তা আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবে।