জিব্বেরেলিন হলো অক্সিন এর মতোই অপর একটি প্রধান উদ্ভিদ হরমোন। এটি মূলত বীজের সুপ্তদশা ভঙ্গ করে অঙ্কুরোদগমে সাহায্যকারী হরমোন।
জাপানি বিজ্ঞানী কুরোসোয়া (Kurosawa) 1926 খ্রিস্টাব্দে ব্যাকানে (Bakanae) রোগাক্রান্ত ধান গাছের অতিকায় বৃদ্ধির জন্য জিব্বেরেল্লা ফুজিকুরই (Gibberella fujikuroi) নামক ছত্রাক থেকে নিঃসৃত পদার্থের (জিব্বেরেলিন) কথা উল্লেখ করেন। 1938 খ্রিস্টাব্দে য়াবুতা (Yabuta) ছত্রাক নিঃসৃত পদার্থটিকে পৃথক করতে সক্ষম হন এবং জিব্বেরেলিন নামে অভিহিত করেন।
সংজ্ঞা (Definition)
বীজের পরিণত বীজপত্র থেকে উৎপন্ন টারপেনয়েড জাতীয় নাইট্রোজেন বিহীন অম্লধর্মী যে উদ্ভিদ হরমোন বীজের সুপ্তদশা ভঙ্গ করতে ও অঙ্কুরোদগমে সাহায্য করে তাকে জিব্বেরেলিন বলে।
উৎস
পরিণত বীজ, অগ্রমুকুল, পাতার বর্ধনশীল অঞ্চল, অঙ্কুরিত চারাগাছ, বীজপত্র, মূলের অগ্রভাগ, ইত্যাদি।
রাসায়নিক গঠন
জিব্বেরেলিন কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন নিয়ে গঠিত ডাইটারপেনয়েড ধর্মী জৈব অ্যাসিড যার রাসায়নিক নাম হলো জিব্বেরেলিক অ্যাসিড (C19H22O6)।
বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ থেকে প্রায় 50 প্রকার এই হরমোন আবিষ্কৃত হয়েছে। যাদের নামকরণ GA1, GA2, GA3, … GA50, এইভাবে করা হয়।
বিভিন্ন জিব্বেরেলিন হরমোন এর মধ্যে GA3 ই উদ্ভিদে অধিক মাত্রায় পাওয়া যায়।
জিব্বেরেলিন এর বৈশিষ্ট্য
1. জিব্বেরেলিন কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন নিয়ে গঠিত নাইট্রোজেন বিহীন এক প্রকার উদ্ভিদ হরমোন।
2. এটি টারপিনয়েড জাতীয় রাসায়নিক জৈব যৌগ, যার রাসায়নিক নাম জিব্বেরেলিক অ্যাসিড (GA)।
3. উদ্ভিদের বীজপত্র, পাতার বর্ধনশীল অঞ্চলে, মূলের অগ্রভাগে, পরিণত বীজে এই হরমোন উৎপন্ন হয়।
4. উদ্ভিদের বীজপত্রে এই হরমোন অধিক মাত্রায় সঞ্চিত হয়।
5. জিব্বেরেলিন হরমোন জইলেম ও ফ্লোয়েম উভয় কলার মাধ্যমে পরিবাহিত হতে পারে। ফলে এর প্রবাহ ঊর্ধ্বমুখী ও নিম্নমুখী উভয়ই হয়।
6. এটি জলে দ্রবণীয়, তাই অতি সহজেই ব্যাপন ক্রিয়ার মাধ্যমে পরিবাহিত হতে পারে।
জিব্বেরেলিন এর কাজ
জিব্বেরেলিনের কাজগুলি হল-
1. বীজের সুপ্তাবস্থা ভঙ্গ
প্রতিটি বীজের একটি নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত জীবনের কোন লক্ষণ প্রকাশ পায় না, অর্থাৎ আদর্শ পরিবেশের উপস্থিতিতেও ( সঠিক মাত্রার আদ্রতা এবং উপযুক্ত পরিমাণ অক্সিজেন ও উষ্ণতা) বীজ অঙ্কুরিত হয় না। বীজের এই অবস্থাকে সুপ্তাবস্থা (Dormancy) বলে। জিব্বেরেলিন বীজের এই সুপ্ত দশা ভঙ্গ করে।
2. বীজের অঙ্কুরোদগম
জিব্বেরেলিন α-অ্যামাইলেজ এর ক্রিয়াকে উদ্দীপ্ত করে যা শস্যের মধ্যে সঞ্চিত খাদ্যকে আর্দ্র বিশ্লেষণ করে সরল শর্করায় পরিণত করে। ভ্রুন এই সরল শর্করা গ্রহণ করে বৃদ্ধি পায় এবং বীজের অঙ্কুরোদগম ঘাটে।
মুগ (ফ্যাসিওলাস অরিয়াস) এর বীজপত্রাবকান্ড ও বীজপত্রের বৃদ্ধি ঘটিয়ে এই হরমোন অঙ্কুরোদগামে সাহায্য করে।
3. পর্বমধ্যের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি
জিব্বেরেলিন উদ্ভিদের কাণ্ডের পর্বমধ্যের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি (Bolting) করে খর্ব বিটপ সম্পন্ন উদ্ভিদের কান্ডের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটায়। উদ্ভিদের সহজাত (বংশগত) খর্বতা এই হরমোন দূর করে।
4. পাতা, ফুল ও ফলের আয়তন বৃদ্ধি
কান্ডের বৃদ্ধি ছাড়াও পাতা ও ফুলের আয়তন বৃদ্ধিতে এই হরমোন সাহায্য করে। এছাড়াও এই হরমোন ফলের আকার বৃদ্ধিতে অংশগ্রহণ করে।
5. ফুলের পরিস্ফুটন
বাইরে থেকে জিব্বেরেলিক অ্যাসিড প্রয়োগ করে উদ্ভিদে প্রয়োজনীয় সময়ের আগেই ফুলের পরিস্ফুটন সম্ভব।
6. লিঙ্গ প্রকাশ
শশা, কুমড়ো প্রভৃতি উদ্ভিদে GA3 এর ঘনত্ব বেশি হলে স্ত্রীফুলের তুলনায় পুরুষ ফুল বেশি উৎপন্ন হয়।
7. পার্থেনোকার্পি
GA প্রয়োগ করে আপেল, নাশপাতি, আঙ্গুর, পেয়ারা ইত্যাদি তে বীজ বিহীন ফল উৎপাদন করা হচ্ছে।