যে দিনটিতে পেনিসিলিন আবিষ্কার হয়েছিল সেইদিনটি আজও স্মরণীয় হয়ে আছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ এই আবিষ্কারের ফলে অকাল মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে আজও। পেনিসিলিন আবিষ্কার পরেও অনেক বিজ্ঞানী এগিয়ে এসেছেন পেনিসিলিনকে নিয়ে আরো নতুন কিছু আবিষ্কারের জন্য।
কিন্তু এই পেনিসিলিন আবিষ্কার হয়েছিল খুবই ছোট্ট একটি ঘটনা দিয়ে। বিশ্ব বিখ্যাত বিজ্ঞানী আলেকজান্ডার ফ্লেমিং হাত ধরেই চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিচয় ঘটে ছিল এই বিরল ছত্রাকের সাথে।
লন্ডনের বাসিন্দা ছিলেন ডাক্তার আলেকজান্ডার ফ্লেমিং।
তার একটা অদ্ভুত ধরনের শখ ছিল রোগজীবাণু প্রতিপালন করা। এক হাসপাতালে তিনি কাজ করতেন আর অবসর সময়ে গবেষণাগারে জীবাণুদের নিয়ে গবেষণা করতেন।
একদিন তিনি কাজ থেকে ফিরে এসে গবেষণাগারে একটা বাক্সের ঢাকনা খুলে দেখলেন বাক্সের মধ্যে এক ধরনের ছত্রাক গজিয়ে উঠেছে। তিনি ওই বাক্সটিকে পরীক্ষা করে বুঝতে পারলেন যে যেখানে ওই ছত্রাকগুলো গজিয়েছে সেখানে রোগ-জীবাণুরা কোন বংশ বিস্তার করতে পারেনি।
আমাদের আশেপাশে এরকম অনেক ঘটনা ঘটে। কিন্তু আমরা সেগুলি পাত্তা না দিয়ে নিজেদের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এই খুঁটিনাটি ঘটনা কারণ খুঁজে বেড়ায়।
সেদিন আলেকজান্ডার ফ্লেমিংও এর কারণ অন্বেষণে লেগে পড়লেন। একসময় তার মনে হল অজ্ঞাত ছত্রাকটি নিশ্চয়ই রোগ নিরাময়ের ক্ষমতা আছে। তখন তিনি ওই ছত্রাকটিকে তুলে নিয়ে প্রতিপালন করতে শুরু করলেন। একসময় বুঝতে পারলেন এটি একটি অতি বিরল ধরনের ছত্রাক। এদের বিজ বাতাসে ঘুরে বেড়ায়।
ফ্লেমিং এই অজ্ঞাত ছত্রাকটি নাম দিলেন পেনিসিলিয়াম নোটেটাম। এরা যখন বংশবিস্তার করে তখন এদের দেহ থেকে এক ধরনের হালকা হলুদ রঙের রস নিঃসৃত হয়। এই রস রোগজীবাণুদের ধ্বংস করে।
তিনি প্রথম খরগোশের দেহে এই রস প্রবেশ করালেন। তিনি দেখলেন খরগোশের তাতে কোন ক্ষতি হলো না। তারপর একদিন একটি কাচের স্লাইডের উপর রাখা রক্তের উপর প্রয়োগ করলেন।এবং বুঝতে পারলেন রক্তের সঙ্গে এর কোন খারাপ প্রতিক্রিয়া হচ্ছে না।
কিন্তু ফ্লেমিং রসায়ন বিজ্ঞানী ছিলেন। তিনি মানবদেহে প্রবেশ করানো উপযুক্ত পেনিসিলিন ওষুধ তৈরি করতে ব্যর্থ হলেন।
এরপর কেটে গেল অনেক বছর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তখন চলছে পুরোদমে।
ইউরোপে হাসপাতাল গুলিতে আহত সৈনিকে ভরে উঠছে। ক্ষতবিক্ষত সৈনিকদের দেহ দিন দিন বিষিয়ে উঠছে। রাষ্ট্রনায়কেরা ও বিজ্ঞানীরা ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়লেন। তখনো ক্ষতস্থান তাড়াতাড়ি সুস্থ করার মত কোন ঔষধি আবিষ্কৃত হয়নি।
সেই জন্য বিজ্ঞানীরা এক সম্মেলনের আয়োজন করলেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বের বিখ্যাত বিখ্যাত সব বিজ্ঞানীরা। আলেকজান্ডার ফ্লেমিং ও সেই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা চলাকালীন তার হঠাৎ মনে পড়ে গেল কিছু বছর আগে তার আবিস্কৃত পেনিসিলিন নামের ছাত্রকটির কথা। সম্মেলন থেকে বাড়ি ফিরে এসে ওই ছাত্রকটির উপর একটি বড় প্রবন্ধ লিখে পাঠিয়ে দিলেন নামকরা বিজ্ঞান পত্রিকায়।
সেই পত্রিকাটি হাতে পড়লো ইংল্যান্ডের বিশিষ্ট চেইন নামে এক বিজ্ঞানীর হাতে।
তিনি বিশ্ব বিখ্যাত বিজ্ঞানী ফ্লোরির সহযোগী ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে তারা মানবদেহে রক্ত নিয়ে নানারকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছিলেন।
ফ্লেমিং এর লেখা প্রবন্ধটি পড়ে তারা খুব উৎসাহী হলেন। তারপর দীর্ঘ গবেষণা করে তারা পেনিসিলিনকে ওষুধরূপে আবিষ্কার করতে পারলেন।