পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ু সাধারণত ক্রান্তীয় মৌসুমি প্রকৃতির। মৌসুমী বায়ু পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুর উপর সর্বাধিক প্রভাব বিস্তার করে, তাই পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ু উষ্ণ-আর্দ্র মৌসুমী প্রকৃতির।
পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য গুলি হল-
১) ঋতু পরিবর্তন
সূর্যের পরিক্রমণ বা বার্ষিক গতি ও মৌসুমী বায়ুর আগমন ও প্রত্যাবর্তনের উপর ভিত্তি করে পশ্চিমবঙ্গে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ ও শীত এই চারটি ঋতু চক্রাকারে আবর্তিত হয়।
এছাড়াও বসন্তকাল ও হেমন্তকাল স্বল্প স্থায়ী।
২) মৌসুমী বায়ুর প্রভাব
পশ্চিমবঙ্গে গ্রীষ্মকাল দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু (আর্দ্র) এবং শীতকাল উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ু (শুষ্ক) প্রবাহিত হয়। যারা এই অঞ্চলের বৃষ্টিপাত উষ্ণতা এবং ঋতু নিয়ন্ত্রণ করে।
৩) বিপরীতমুখী বায়ু প্রবাহ
পশ্চিমবঙ্গে গ্রীষ্মকাল সমুদ্রের উপর দিয়ে আর্দ্র দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ু এবং শীতকাল স্থলভাগের উপর দিয়ে শুষ্ক উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ু প্রবাহিত হয়।
৪) আর্দ্র গ্রীষ্মকাল ও শুষ্ক শীতকাল
সূর্যের উত্তরায়নের ফলে গ্রীষ্মকাল জলভাগের তুলনায় স্থলভাগ ও অধিক উত্তপ্ত হয়ে নিম্নচাপ বিরাজ করে।
ফলে সমুদ্রের উপর দিয়ে জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু ওই নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে ছুটে আসে এবং পার্বত্য অঞ্চলে ধাক্কা খেয়ে পশ্চিমবঙ্গে প্রচুর পরিমাণে শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত ঘটায়।
শীতকালে সূর্যের দক্ষিণায়নের ফলে গ্রীষ্মকালের বিপরীত অবস্থা লক্ষ্য করা যায়।
তখন জলভাগ থাকে নিম্নচাপ এবং স্থলভাগে উচ্চচাপ বিরাজ করে। তাই স্থলভাগ অঞ্চল থেকে শুষ্ক বায়ু জলভাগের দিকে প্রবাহিত হয়।
৫) বৃষ্টিপাতের অসম বন্টন
পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন পরিমাণ বৃষ্টিপাত ঘটে। যেমন উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ সর্বাধিক হয় প্রায় 300- 400 cm, সে তুলনায় সমভূমি অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ মাঝারি রকমের 100- 150cm।
মালভূমি অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ আরও কম।
৬) বৃষ্টিপাতের অনিশ্চয়তা
পশ্চিমবঙ্গে মৌসুমী বায়ু অনিয়মিত ও অনিশ্চিত।
প্রতিবছর বৃষ্টিপাতের পরিমাণ সমান হয় না। কোন কোন বছর অতিবৃষ্টি আবার কোন কোন বছর অনাবৃষ্টি দেখা যায়।
৭) জলবায়ুর তারতম্য
পশ্চিমবঙ্গে সর্বত্র অঞ্চলে একরকম জলবায়ু বিরাজমান নয়।
যেমন পার্বত্য অঞ্চলে জলবায়ু শীতল প্রকৃতির।
মালভূমি অঞ্চলের জলবায়ু চরম চরমভাবাপন্ন প্রকৃতির এবং সমভূমি ও উপকূলবর্তী অঞ্চলে সমভাবাপন্ন জলবায়ু লক্ষ্য করা যায়।
৮) স্থানীয় বায়ুর প্রভাব
পশ্চিমবঙ্গে গ্রীষ্মকালে মালভূমি ও সমভূমি অঞ্চলে লু ও কালবৈশাখীর পাদূর্ভাব লক্ষ্য করা যায়।
কিন্তু পার্বত্য অঞ্চলে স্থানীয় বায়ুর প্রভাব লক্ষ্য করা যায় না।