মৌসিন কথার অর্থ হল ঋতু। অর্থাৎ ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ভিন্ন দিক থেকে যে বায়ু প্রবাহিত হয় তাকে মৌসুমী বায়ু বলে।
পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ু ক্রান্তীয় মৌসুমী প্রকৃতির হওয়ায় পশ্চিমবঙ্গের উষ্ণতা বৃষ্টিপাত আপেক্ষিক আর্দ্রতা প্রভৃতি এই বায়ু নিয়ন্ত্রিত করে।
পশ্চিমবঙ্গে মৌসুমী বায়ুর প্রভাব গুলি নিম্নে আলোচনা করা হলো-
১) পশ্চিমবঙ্গে গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু জুন মাস প্রবাহিত হয়। এই বায়ু সমুদ্রের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকে।
২) শীতকালে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে মৌসুমী বায়ু প্রবাহিত হয়। এই বায়ুতে জলীয়বাষ্প না থাকায় শীতকাল শুষ্ক ও আর্দ্র প্রকৃতির হয়।
৩) পশ্চিমবঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর বঙ্গোপসাগরীয় শাখা দক্ষিণ দিক থেকে উত্তর দিকে অগ্রসর হয়।
৪) দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী অঞ্চলে বাধা না পেয়ে উত্তরে হিমালয় পর্বতে ধাক্কা খেয়ে শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত ঘটায়।
৫) পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন পরিমাণ বৃষ্টিপাত ঘটে।
যেমন উত্তরে পার্বত্য অঞ্চলে সবথেকে বেশি বৃষ্টিপাত ঘটে প্রায় 400 cm।
মধ্যভাগ ও গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ অঞ্চলে এই বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 175-200 cm এবং পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 75-100 cm।
৬) পশ্চিমবঙ্গের গড় বৃষ্টিপাত 175 cm হলেও মৌসুমী বায়ু খামখেয়ালিপনায় কোন কোন স্থানে অতিবৃষ্টি বা বন্যা এবং কোন কোন স্থানে অনাবৃষ্টি বা খরা লক্ষ্য করা যায়।
৭) অক্টোবর নভেম্বর মাসে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে ফিরে যাবার ফলে আকাশ মেঘমুক্ত থাকে।
৮) প্রত্যাবর্তনকারী মৌসুমী বায়ু বা উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ু স্থলভাগের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ওই বায়ুতে জলীয় বাষ্প থাকে না বললেই চলে তবে ওই বায়ুর প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গে দক্ষিণবঙ্গে বা সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়ে থাকে।
৯) দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গে গ্রীষ্মকালীন উষ্ণতা কিছুটা কমিয়ে দেয়।
১০) পশ্চিমবঙ্গের মোট বৃষ্টিপাতের প্রায় 90% বৃষ্টিপাত এই বায়ুর প্রভাবাবি ঘটে।
১১) জুন মাসে দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ু পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করে এবং সেপ্টেম্বর অক্টোবর মাসে বিদায় নেয়।
১২) পশ্চিমবঙ্গে উত্তর পুরো মৌসুমী বায়ু অক্টোবর নভেম্বর মাসে প্রবেশ করে এবং জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি মাসে ফিরে যায়।