জৈব আবহবিকার কাকে বলে ও জৈব আবহবিকারের পদ্ধতি নিম্নে আলোচনা করা হলো-
জৈব আবহবিকার
মানুষসহ উদ্ভিদ ও প্রাণী দ্বারা শিলারাশি যান্ত্রিকভাবে বিচূর্ণীকৃত ও রাসায়নিকভাবে বিয়োজিত হয় তখন তাকে জৈব আবহবিকার বলে।
জৈব আবহবিকারের পদ্ধতি
জৈব আবহবিকার যান্ত্রিক ও রাসায়নিক পদ্ধতিতে ঘটে থাকে
1) উদ্ভিদের মাধ্যমে জৈব আবহবিকার
১) যান্ত্রিক পদ্ধতিতে:
শিলার উপর গাছপালা জন্মালে শিকড় ও মূল শিলার মধ্যে প্রবেশ করে এবং শিলায় ফাটল সৃষ্টি করে থাকে। অনেক সময় এই পদ্ধতিতে শিলা ফেটে টুকরো টুকরো খণ্ডে পরিণত হয়।
২) রাসায়নিক পদ্ধতিতে:
উদ্ভিদ বা ছোট ছোট গাছের লতাপাতা, শিকড় মাটিতে পচে জৈব অ্যাসিড যেমন হিউমিক, ল্যাকটিক, সাইট্রিক অ্যাসিড তৈরি করে। এই সমস্ত জৈব অ্যাসিডের সংস্পর্শে শিলাগঠিত খনিজের রাসায়নিক বিয়োজন সংঘটিত হয়। এই বিয়োজনের ফলে শিলা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, ফাটল ধরে এবং চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে পড়ে।
সরলবর্গীয় অরণ্যের গাছ থেকে যে জৈব পদার্থ বা হিউমাস সৃষ্টি হয় তা জলের সাথে মিশে হিউমিক অ্যাসিড তৈরি করে, যা আবহবিকারগ্রস্ত শিলা থেকে খনিজ লবণ, লৌহ অক্সাইড প্রভৃতি অপসারণ ঘটায়।
2) প্রাণীর মাধ্যমে জৈব আবহবিকার:
১) যান্ত্রিক পদ্ধতিতে:
কেঁচো, ইঁদুর, খরগোশ, পিঁপড়ে, প্রেইরী কুকুর ইত্যাদি প্রাণী মাটি খুঁড়ে বাসা বানায়। এর ফলে মাটি আলগা হয়ে শিলার আবহবিকার ঘটাতে সহায়তা করে।
শামুক চুনাপাথরের মধ্যে গর্ত তৈরি করে শিলার যান্ত্রিক আবহবিকারে সহায়তা করে।
২) রাসায়নিক পদ্ধতিতে:
মৃত্তিকায় অসংখ্য ব্যাকটেরিয়া, মস, লিচেন ইত্যাদি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রাণী, পশু-পাখির বর্জ্য পদার্থ ও মৃত প্রাণীর দেহাবশেষ থেকে মিশ্রিত জৈব অ্যাসিড ব্যাসেল্ট, ম্যাগনেসিয়াম, ফেলস্পার এবং সালফার
যৌগ দ্বারা গঠিত শিলাস্তরে রাসায়নিক আবহবিকার ঘটায়।
3) মানুষের মাধ্যমে আবহবিকার:
মানুষ উন্নত জীব হিসাবে খুব কম অঞ্চলে শিলাস্তরে আবহবিকার সংঘটিত করলেও, প্রাকৃতিক উপায়ে কোন শিলাস্তর আবহবিকারগ্রস্ত হতে যেখানে বহু বছর সময় লাগে সেখানে মানুষ দ্রুত শিলাস্তরের পরিবর্তন ঘটাতে পারে। যেমন-
i) খনিজ দ্রব্য উত্তোলনের জন্য ডিনামাইট বিস্ফোরণে শিলাস্তরের ফাটল ও চূর্ণ-বিচূর্ণ করা হয়।
ii) রাস্তা নির্মাণ, গৃহ নির্মাণ বা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য শিলা ফাটানো হয়ে থাকে।
iii) কৃষিকাজে প্রয়োজনীয় জমি তৈরি করতে শিলাস্তর ও ভূমির পরিবর্তন করা হয়ে থাকে।
iv) দূষণ প্রবণ এলাকায় অ্যাসিড বৃষ্টি পরোক্ষভাবে শিলার রাসায়নিক আবহবিকার ঘটিয়ে থাকে।