জৈব অভিব্যক্তি সম্পর্কে ল্যামার্কের মতবাদ

ল্যামার্কবাদ

বিজ্ঞানী ল্যামার্ক (17441829) সর্বপ্রথম বিবর্তন সম্পর্কিত সুসংগঠিত ব্যাখ্যা প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন তাঁর লেখা ‘ফিলোজফি জুওলজিক‘ (1809) বইয়ের মাধ্যমে। তিনি তার ব্যাখ্যাগুলোকে সূত্র বা তত্ত্বের আকারে প্রকাশ করেছিলেন যাদের ল্যামার্কিজম বা ল্যামার্কবাদ বলা হয়।

তার দেওয়া কিছু ধারণা পরবর্তীকালে ভুল প্রমাণিত হলেও তাঁর কাজটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বিবর্তন সম্পর্কিত বিষয়ের ক্ষেত্রে জ্ঞান অর্জনের জন্য।

অভিব্যক্তি সম্পর্কে ল্যামার্কের তত্ত্বসমূহ

অভিব্যক্তি সম্পর্কিত ল্যামার্কের মতবাদ গুলি হল-

i) অর্জিত বৈশিষ্ট্যের উত্তরাধিকার:

ল্যামার্কের মতে প্রতিটি জীব তার জীবনকালে অর্জিত করা সকল বৈশিষ্ট্য এক জনু থেকে অপর জনুতে সঞ্চারিত করে।

ii) পরিবেশের প্রভাব এবং জীবের সচেষ্টা ও আঙ্গিক পরিবর্তন:

প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল পরিবেশে অভিযোজনের জন্য যে বিশেষ কোনো অঙ্গের বৃদ্ধি বা ক্ষয় ঘটায়, যা বিবর্তনের দ্বারা সেই জীবের একটি অর্জিত বৈশিষ্ট্য হয়।

iii) ব্যবহার ও অব্যবহার সূত্র:

জীবদের কোন অঙ্গ ক্রমাগত ব্যবহৃত হলে সেটি সবল, কার্যক্ষম ও সুগঠিত হতে পারে।

আবার, ক্রমাগত অব্যবহৃত কোন অঙ্গ অপ্রয়োজনীয় হওয়ায় নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়ে অবশেষে বিলুপ্ত হয়ে যায়।

ল্যামার্কের মতে, জীবের প্রয়োজনে জীবদেহে নির্দিষ্ট কোন নতুন অঙ্গের উৎপত্তি এবং পুরনো কোন অঙ্গের অবলুপ্তি ঘটে থাকে।

iv) নতুন প্রজাতির উৎপত্তি:

ল্যামার্কের মতে, কোন জীবদেহ তাদের জীবনকালে অর্জিত বৈশিষ্ট্য গুলি বংশানুসরণের জন্য এবং প্রতিটি জনতে নতুন নতুন বৈশিষ্ট্য অর্জিত হবার জন্য একটি প্রজাতি আরও একটি নতুন প্রজাতি সৃষ্টি করে।

ল্যামার্কের মতবাদের স্বপক্ষে কিছু যুক্তি

i) ল্যামার্কের মতবাদের মাধ্যমে বলা যায়, জিরাফের দীর্ঘ লম্বা গলা হবার কারণ। ল্যামার্কের মতে জিরাফ ক্রমাগত উঁচু গাছ থেকে পাতার সংগ্রহ করে খেতে থাকায় গলার ব্যবহার চলতে ছিল। পরবর্তীতে অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণের মাধ্যমে জিরাফ লম্বা গলা লাভ করে।

জৈব অভিব্যক্তি সম্পর্কে ল্যামার্কের মতবাদ - জিরাফের লম্বা গলার চিত্র
ছোট গলার জিরাফ থেকে লম্বা গলার জিরাফের উৎপত্তি

ii) উটপাখির পূর্বপুরুষেরা ডানা ব্যবহার করে আকাশে উড়তে পারতো। কিন্তু ক্রমাগত ডানা ব্যবহার না করতে থাকায় পরবর্তী প্রজন্মে তাদের ডানা লুপ্তপ্রায় অঙ্গে পরিণত হয়েছে।

iii) আদিম কালে সমস্ত পাখির পায়ের আঙ্গুলগুলি একই রকমের ছিল। পরবর্তীতে কিছু পাখি জলে বসবাস করতে শুরু করায় তারা ক্রমাগত জলে সাঁতার কাটতে থাকে। জলের পরিবেশে খাপ খাওয়ানোর জন্য জলের পাখি গুলির পায়ের আঙ্গুলের মাঝে অংশ পাতলা চামড়ার লিপ্তপদ গঠিত হয়।

iv) সাপের পূর্বপুরুষদের চারটে পা ছিল। কিন্তু ভূগর্ভ অভিযোজনের জন্য ক্রমাগত সেই পায়ের ব্যবহার না করায় ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যায়।

ল্যামার্কের মতবাদের বিপক্ষে কিছু যুক্তি

i) বিজ্ঞানী ভাইসম্যান একজোড়া ইঁদুর দম্পতি লেজ কেটে পরীক্ষা করেছেন। নতুন সন্তানের লেজ কেটে তাদের ওপরেও পরীক্ষা চালাতে থাকেন। এইভাবে ক্রমাগত 35 জনু ধরে লেজকাটা ইঁদুর দিয়ে পরীক্ষা করলেও অবশেষে কোন লেজবিহীন অপত্য পাওয়া যায় নি।

ii) পরপর 60 জনু ধরে ড্রোসোফিলা মাছিকে পুরোপুরি অন্ধকার ঘরে রেখে জনন ঘটানোর পর কোন ক্ষেত্রেই দৃষ্টিহীন মাছি জন্মাতে দেখা যায় নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *