ভারতীয় অনুন্নত জাতিসমূহের মধ্যে অন্যতম ছিল মতুয়া সম্প্রদায়। বিশ শতক নাগাদ তারা সংগঠিত আন্দোলনের সূচনা করে।
মাতুয়া কারা
অবিভক্ত বাংলায় নিম্নবর্গের হিন্দু তফশিলি জাতিগুলির মধ্যে মাতুয়ারা ছিল দ্বিতীয় বৃহত্তর সম্প্রদায়। ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত জনগণনার রিপোর্টে এদেরকে ‘পোদ‘ বলে চিহ্নিত করা হয়। এদের অধিকাংশই ছিল গরিব, কৃষক ও শ্রমিক- যারা দীর্ঘদিন ধরে বর্ণ হিন্দুদের দ্বারা অত্যাচারিত হয়।
আন্দোলনের কারণ
তৎকালীন সময়ে হিন্দু শূদ্র তথা এই সম্প্রদায়ের মানুষেরা ছিল অচ্ছুত। তারা সমাজের চোখে ছিল ঘৃণিত ও অবহেলিত।
তাই নানাভাবে সমাজে তারা শোষিত হতে থাকে। তাদের না ছিল জমিজমা, না ছিল শিক্ষার অধিকার।
এই হীন অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য তারা সংঘটিত হয় ও আন্দোলনের সূচনা করে।
আন্দোলনের সূত্রপাত
১৮৭০ এর দশকে হরিচাঁদ ঠাকুর নামে এক ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি এই আন্দোলন সংগঠিত করেন। মাতুয়াদের মধ্যে বৈষ্ণবীয় ভাবধারার ভক্তিবাদী আন্দোলনের জন্ম দেন। এভাবেই আন্দোলনের সূচনা হয়।
আন্দোলনের বিকাশ
হরিচাঁদ ঠাকুরের পর তার পুত্র গুরুচাঁদ ঠাকুর উত্তরাধিকার সূত্রে ধর্মগুরুর পদ লাভ করেন। উদ্দেশ্য পূরণের জন্য তিনি ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন গড়ে তোলেন। আবার ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দে খুলনার দওডাঙ্গায় মাতুয়া সম্মেলন হয়। আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে আসেন যোগেন মন্ডল, বিরাট চন্দ্র মন্ডল, রাজেন্দ্র নাথ মন্ডল, মুকুন্দ বিহারী প্রমুখ।
মন্তব্য
১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে আন্দোলন দানা বাঁধতে শুরু করলেও অবশেষে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে আদমশুমারিতে তাদের নমঃশূত্র নামটি আইনি স্বীকৃতি পায়। তবে তাদের আন্দোলনকে সম্পূর্ণ মর্যাদা দিয়েই বলা যায়, তারা যখন শাস্ত্রীয় প্রমাণ উদ্ধার করে নিজেদের ব্রাহ্মণত্ব দাবি করেন, তখন তাদের আন্দোলনের দুর্বলতার দিকটি ধরা পড়ে যায়।