উদ্ভিদ কীভাবে উদ্দীপনায় সাড়া দেয় উদাহরণসহ বর্ণনা করো

সমস্ত প্রকার জীবই পরিবেশের উদ্দীপনার প্রভাবে কমবেশি সংবেদনশীলতা প্রদর্শন করে। প্রথমে মনে করা হত পরিবেশের কোন পরিবর্তনই উদ্ভিদেরা সনাক্তকরণ করতে পারে না। কিন্তু বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু প্রমাণ করেন যে উদ্ভিদও প্রাণীদের মতোই পরিবেশের পরিবর্তন অর্থাৎ উদ্দীপক শনাক্ত করতে পারে এবং সেই অনুযায়ী সাড়া প্রদান করে।

যদিও বেশিরভাগ উদ্ভিদ একটি নির্দিষ্ট স্থানে স্থির থাকে তাই প্রাণীদের তুলনায় উদ্ভিদের সারা প্রদানের ঘটনা অনেক কম চোখে পড়ে। সাধারণত উদ্ভিদেরা উদ্দীপকের প্রভাবে একটি নির্দিষ্ট স্থানে স্থির থেকে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সঞ্চালন অর্থাৎ চলনের মাধ্যমে সাড়া প্রদান করে। তবে উদ্ভিদের সাড়া প্রদান বলতে ধীর বৃদ্ধিজ চলন বা রসস্ফীতি জনিত চলনকেই বোঝায়।

উদ্ভিদের সাড়া প্রদানের পদ্ধতি

উদ্ভিদের সাড়া প্রদান কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয় যা নিচে আলোচনা করা হল:

1. উদ্দীপনার উপলব্ধিকরন

উদ্ভিদের কোন কোষ, কলা অথবা অঙ্গ উদ্দীপনা গ্রাহক (stimulation receptor) তা সঠিকভাবে নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। তবে মনে করা হয়, উদ্ভিদের যে যে অংশে উদ্দীপনা প্রয়োগ করা হয় সেই অংশগুলিই উদ্দীপনা গ্রাহক হিসেবে কাজ করে।

2. উদ্দীপনার পরিবহন

গ্রাহক অঙ্গের মাধ্যমে গৃহীত উদ্দীপনা উদ্ভিদ দেহে বিভিন্ন বিক্রিয়ার দ্বারা ইলেকট্রিক্যাল সিগন্যাল এ রূপান্তরিত হয়। এই ইলেকট্রিক্যাল সিগন্যাল বা কেমিক্যাল ম্যাসেঞ্জার কোশের প্লাজমোডেসমাটার মাধ্যমে সাড়া প্রদানকারী অঙ্গের কোষ বা কলাতে স্থানান্তরিত হয়।

3. সাড়া প্রদান

ইলেকট্রিক্যাল সিগন্যাল বা কেমিক্যাল ম্যাসেঞ্জার নির্দিষ্ট সারা প্রদানকারী অঙ্গের কোশ বা কলাতে পৌঁছানোর পর ওই কোষ বা কলার বৃদ্ধি বা রসস্ফীতির দ্বারা উদ্ভিদ সাড়া প্রদান করে।

উদ্ভিদের সাড়া প্রদানের উদাহরণ

১. লজ্জাবতী লতার পাতার চলন

লজ্জাবতী (Mimosa pudica) গাছের পাতার কোন অংশের যেকোনো একটি পত্রকে স্পর্শ করলে আর সমস্ত পত্রগুলি গুটিয়ে যায় এবং ঝুলে পড়ে। এক্ষেত্রে উদ্দীপনা (স্পর্শ) প্রথমে লজ্জাবতী পাতার পত্রের মূলদেশের কোশে পরিবাহিত হয়ে রসস্ফীতির হ্রাস ঘটায়। কোশের এই রসস্ফীতির হ্রাসের ফলে পাতার অগ্রভাগ থেকে পত্রমূলের দিকে পত্রকগুলি পরপর জোড়ায় জোড়ায় বন্ধ হয়ে যায়। সবশেষে উদ্দীপনা যখন পাতার উপাধান অংশে পৌঁছায় তখন সমগ্র পাতাটি নুইয়ে পড়ে।

২. বনচাঁড়াল এর পাতার চলন

বনচাঁড়াল (Desmodium gyrans) গাছের পাতাগুলি ত্রিফলক যুক্ত। দিনের বেলায় পাতার পত্রবৃন্তের পাশের ছোট দুটি পত্রক উপবৃত্তাকার পথে পর্যায়ক্রমে ওপরে ও নিচে ওঠানামা করতে থাকে। এক্ষেত্রে পত্রবৃন্ত কোশের আভ্যন্তরীণ উদ্দীপনার প্রভাবে রসস্ফীতির হ্রাসবৃদ্ধির কারণে এই রূপ চলন দেখা যায়। যা এক ধরনের প্রকরণ চলন। এই প্রকার চলনে বনচাঁড়াল পাতার দুটি পত্রক একটি সম্পূর্ণ আবর্তন (180) করতে সময় নেয় প্রায় দুই মিনিট।

বনচাঁড়াল এর পাতার চলন - উদ্ভিদ কীভাবে উদ্দীপনায় সাড়া দেয় উদাহরণসহ বর্ণনা
বনচাঁড়াল এর পাতার চলন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *