জোয়ার-ভাটা মানবজীবনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করে। এর ফলে অনেক সুবিধা পাওয়া যায় তেমন অনেক অসুবিধারও সম্মুখীন হতে হয়। যেমন-
1) জোয়ার ভাটার সুফল
জোয়ার ভাটার সুফল গুলি হল-
i) নৌ চলাচলের সুবিধা
জোয়ারের ফলে নদীতে জলের পরিমাণ ও উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। এর ফলে জাহাজ নদী বন্দরে সহজে আসতে পারে আবার ভাটার সময় সহজেই সমুদ্রে ফিরে যেতে পারে।
যেমন- কলকাতা বন্দর হুগলি নদীর মোহনা থেকে 50 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। জোয়ারের সময় অগভীর নদী বন্দরে জলস্ফীতি হয় ফলে সহজে বড় বড় জাহাজ প্রবেশ করতে পারে।
ii) নাব্যতা বৃদ্ধি
ভাটার টানে নদী মোহনা পলি মুক্ত থাকার ফলে নদীর গভীরতা ও নাব্যতা বৃদ্ধি পায়। নদীখাত পলি মুক্ত থাকায় নৌ চলাচলে সুবিধা হয়।
iii) বদ্বীপ গঠনে বাধা
ভাটার সময় টানের প্রভাবে নদীর মোহনা পলিমুক্ত হয় এবং বদ্বীপ গঠনে বাধা সৃষ্টি করে।
iv) মৎস্যজীবীদের সুবিধা
জোয়ারে জলের সঙ্গে নানান প্রকার সামুদ্রিক মাছ চলে আসে যা মৎস্যজীবীদের জীবনধারণে সাহায্য করে। এছাড়া অনেক মাছ ডিম পাড়ার জন্য জোয়ারের জলের সঙ্গে নদীর মোহনায় চলে আসে ফলে প্রচুর মাছের সমাগম ঘটে।
যেমন: বর্ষাকালে ডিম করার জন্য ইলিশ মাছ সমুদ্র থেকে হুগলি নদীতে প্রবেশ করে, এর প্রভাবে উপকূলীয় মৎস্যজীবীরা প্রচুর লাভবান হয়।
v) বরফমুক্ত নদীবন্দর
শীত প্রধান অঞ্চলগুলিতে জোয়ারের লবণাক্ত জল নদীতে প্রবেশ করায় বন্দর গুলি বরফ মুক্ত থাকে এবং জলের নিয়মিত প্রবাহ বজায় থাকে।
vi) বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন
বর্তমানে জোয়ারের জলকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।
যেমন: ভারতের গুজরাটের কাম্বে, খাম্বত উপসাগরে, পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবনের দুর্গাদোয়ানি খাড়িতে জোয়ার ভাটা বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে।
vii) আবর্জনা মুক্ত নদীপথ
ভাটার ফলে নদীর নোংরা আবর্জনা ও পলি নদী থেকে সমুদ্রে পতিত হয় এবং নদীর জল পরিষ্কার থাকে।
2) জোয়ার ভাটার কুফল:
জোয়ার ভাটার কুফল গুলি হল-
i) জমি ও ঘর বাড়ির ক্ষয়ক্ষতি
প্রবল জোয়ারের ফলে অনেক সময় উপকূল ভাগের কৃষি জমি ও ঘরবাড়ির ক্ষয়ক্ষতি হয়। নৌকা বা লঞ্চ ডুবির ঘটনাও ঘটে থাকে।
ii) নদীর গভীরতা হ্রাস
কম খরস্রোতা নদীতে জোয়ার ভাটার প্রভাব কম কাজ করে বলে নদী খাতে পলি ও আবর্জনা সঞ্চয় বেশি ঘটে। এর ফলে নদী নাব্যতা হ্রাস ও নদীখাত অগভীর হয়ে ওঠে।
যেমন– হুগলি নদী
iii) নদীপাড় ভাঙ্গন
জোয়ার ভাটার ফলে নদীপাড় ক্রমে ক্রমে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং নদী আরো চওড়া হতে থাকে। এর ফলে নদী পাড়ে বসবাস অযোগ্য হয়ে ওঠে।
যেমন: পশ্চিমবঙ্গের দেগঙ্গা, কালিয়াচক, মানিকচকের বিস্তীর্ণ অঞ্চল গঙ্গা নদীর ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
iv) নদীর জলে লবনতা বৃদ্ধি
জোয়ারের ফলে সমুদ্রের লবণাক্ত জল নদীর স্বাদু জলের সাথে মিশে নদীর জলকে লবণাক্ত করে ফেলে। এর ফলে কৃষি ক্ষেত্রে জলসেচের ও জলপানের অসুবিধে তৈরি হয়।
v) বানডাকা
অতি শক্তিশালী তীব্র জোয়ার হঠাৎই উপকূলবর্তী এলাকা প্লাবিত করে বানডাকা সৃষ্টি করে। এর প্রভাবে সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি সম্ভাবনা থাকে।