আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে সাময়িক পত্র ও সংবাদপত্রের গুরুত্ব

আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে সাময়িক পত্র ও সংবাদপত্রের গুরুত্ব অপরিসীম। এগুলি ছাড়া আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনা অসম্পূর্ণ থেকে যেত। মূলত ঊনবিংশ শতকের শেষভাগে ভারতের সংবাদপত্রের প্রকাশনা শুরু হয়।

নিম্নে সাময়িক পত্র ও সংবাদপত্রের গুরুত্ব গুলি আলোচনা করা হল-

(১) সমকালীন ব্রিটিশ শাসনের ঐতিহাসিক নথিপত্র

তৎকালীন সাময়িকপত্র ও সংবাদপত্রগুলির মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসনের বিভিন্ন রীতি-নীতি ও আইন সম্পর্কে জানা যায়।

যেমন-ভারত শাসন আইন, রাওলাট আইন সম্পর্কে সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়। এছাড়া সমকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সামাজিক অবস্থা, ধর্ম সংস্কৃতির শোষণ সম্পর্কে নানা তথ্যাদি বা নথিপত্র পাওয়া যায়।

(২) ব্রিটিশ শাসনের বহুস্তরীয় শোষণ

আধুনিক ভারতের ইতিহাসের ব্রিটিশ শোষণ ও অত্যাচারের তথ্যগুলি সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্রে ছাপা হত। ভারতীয় কুটির শিল্প ও ব্যবসা ধ্বংস করা হয়েছে, কৃষকদের ওপর অমানবিক নির্যাতন করার কথা জানা যায়। জোর করে নীল চাষ করানো ও সাঁওতালদের ওপর ব্রিটিশ সরকারের অত্যাচারের নানা ঘটনা- হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার মাধ্যমে সামনে আসে।

(৩) অসন্তোষ

ভূমি ও কৃষিতে শোষণ, অর্থনৈতিক শোষণ, রাজনৈতিক অনীহা, বিশেষ করে নীল চাষী ও সাঁওতালদের ওপর ব্রিটিশ সরকার এবং মহাজনদের শোষণ অত্যাচারের বিরুদ্ধে ভারতীয়রা বিভিন্ন আন্দোলন শুরু করে এইসব খবরগুলি নিয়মিত সংবাদপত্রে প্রকাশিত হতো। এমন কিছু সাময়িকপত্র ও সংবাদপত্র হলো -হিন্দু প্যাট্রিয়ট, বঙ্গদর্শন, বেঙ্গল গ্যাজেট।

(৪) জাতীয়তাবাদের জাগরণ

ব্রিটিশ সরকারের এই কু-কর্মগুলি প্রতিনিয়ত সংবাদপত্র ও সাময়িক পত্রিকা গুলোতে ছাপানো হতো। এছাড়া কোন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে স্পৃহা দেখা দিলে পত্রিকা গুলোতে তা ফলাও বারে ছাপা হতো, যার মাধ্যমে ভারতের সাধারণ মানুষের মধ্যে জাতীয়তাবাদের জাগরণ ঘটতে থাকে। এমন কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র হল- দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ-এর সোমপ্রকাশ পত্রিকা, যার মাধ্যমে রাজনৈতিক চেতনার বিকাশকে সাহায্য করে। দরিদ্র চাষীদের সমর্থন করে, সংবাদপত্র আইনের প্রতিবাদ করেন।

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বঙ্গদর্শন‘।

সুভাষচন্দ্র বসু ফরওয়ার্ড ব্লক পত্রিকার মাধ্যমে ব্রিটিশ বিরোধী মতাদর্শ প্রকাশিত হয়। এগুলি ভারতীয়দের মধ্যে ঐক্যবোধ ও জাতীয়তাবাদের জাগরণ ঘটায়।

(৫) জনমত গঠন ও স্বাধীনতা আন্দোলনে বিবরণ

দেশে সাধারণ মানুষের মধ্যে (সংবাদপত্র ও সাময়িক পত্রিকার মাধ্যমে) জাতীয়তাবাদের জাগরণের ফলে তারা ব্রিটিশ বিরোধী জনমত গঠন করতে এবং স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগদানের সাহসী হয়। সংবাদপত্র সাময়িক পত্রিকা গুলি থেকে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিভিন্ন পর্যায়ে আন্দোলনগুলি জানা যায়-১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহ সম্পর্কে বিভিন্ন সংবাদপত্র ও সাময়িক পত্রিকার মাধ্যমে শিক্ষিত সামাজের প্রতিক্রিয়া জানা যায়। এই থেকে শুরু করে ১৯৪২ সালে গান্ধীজীর ভারত ছাড়ো আন্দোলন পর্যন্ত নানা আন্দোলনের তথ্য ও বিবরণ আমরা সংবাদপত্র ও সাময়িক পত্রিকাগুলি থেকে পেয়ে থাকি।

শুধু আন্দোলনই না পরবর্তীকালে দেশ স্বাধীন ও আরও বিষয়ে আমরা জানতে পারি।

উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সংবাদপত্র ও পত্রিকা গুলি হল-সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেঙ্গলি পত্রিকা, যুগান্তর ও সন্ধ্যা পত্রিকা, অমৃতবাজার পত্রিকা,মাতৃভূমি সংবাদপত্র ইত্যাদি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *