তাপবলয় কাকে বলে ও পৃথিবীর প্রধান প্রধান তাপবলয় সমূহ

পৃথিবীর গোলাকৃতির জন্য নিরক্ষরেখা থেকে মেরু অঞ্চলের দিকে অক্ষাংশ অনুসারে সূর্য রশ্মির পতন কোণের তারতম্যের জন্য উষ্ণতার পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। এই উষ্ণতার পার্থক্যের ভিত্তিতে এক একটি নির্দিষ্ট উষ্ণতার তাপ অঞ্চল ভূ-পৃষ্ঠকে বলয় আকারে পূর্ব-পশ্চিম বেষ্টন করেছে, এগুলিকেই তাপ বলয় বলে।

তাপ বলয় সমূহ

ভূপৃষ্ঠে প্রাপ্ত সূর্যালোকের পরিমাণ এবং কোনের ভিত্তিতে তিন প্রকার তাপবলয় পরিলক্ষিত হয়।

(1 )উষ্ণমণ্ডল (নিরক্ষরেখা থেকে উভয় গোলার্ধে ক্রান্তীয় রেখা পর্যন্ত)

(2)নাতিশীতোষ্ণ মন্ডল (ক্রান্তীয় রেখা থেকে মেরুবৃত্ত পর্যন্ত)

(3) হিমমন্ডল (উত্তর গোলার্ধের মেরুবৃত্ত থেকে মেরু বিন্দু পর্যন্ত)

পৃথিবীর প্রধান প্রধান তাপবলয় সমূহ - চিত্র - ছবি - তাপবলয় কাকে বলে
পৃথিবীর প্রধান প্রধান তাপবলয় সমূহ

(1) উষ্ণ মন্ডল

অবস্থান

নিরক্ষরেখার উভয় পাশে উত্তরে কর্কটক্রান্তি রেখা থেকে (23 1⁄2° উঃ) দক্ষিণ মকরক্রান্তি রেখা (23 1⁄2° দঃ) পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চল উষ্ণমণ্ডল নামে পরিচিত, যার দৈর্ঘ্য 5200km.

দেশসমূহ

ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা, শ্রীলংকা, নাইজেরিয়া, ঘানা, কেনিয়া, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি।

বৈশিষ্ট্য

(১) এখানে সারা বছর সূর্য লম্ব ভাবে পতিত হয়।

(২) এখানে সারা বছরই দিন রাত্রি দৈর্ঘ্য প্রায় সমান থাকে।

(৩) গড় তাপমাত্রা 27°C বেশি থাকে, এ অঞ্চলের ঋতুভেদ লক্ষ্য করা যায় না।

(৪) এই অঞ্চল অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় অধিক উষ্ণ থাকে।

উপবিভাগ

অবস্থানে ভিত্তিতে উষ্ণ মন্ডল দুই ভাগে বিভক্ত। যথা-

(i) নিরক্ষীয় অঞ্চলঃ 0° থেকে 10° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষরেখার মধ্যবর্তী অঞ্চল, গড় উষ্ণতা 27°C

(ii) ক্রান্তীয় অঞ্চলঃ উভয় গোলার্ধে 10° থেকে 23 1⁄2° অক্ষরেখার মধ্যবর্তী অঞ্চল, গ্রীষ্মকালীন গড় উষ্ণতা 32°C এবং শীতকালীন গড় উষ্ণতা 20°C

(2) নাতিশীতোষ্ণ মন্ডল

অবস্থান

উত্তর গোলার্ধের কর্কটক্রান্তি রেখা (23 1⁄2° উঃ) থেকে সুমেরু বৃত্ত (66 1⁄2° উঃ) পর্যন্ত এবং দক্ষিণ গোলার্ধে মকরক্রান্তি রেখা (23 1⁄2° দঃ) থেকে কুমেরু বৃত্ত (66 1⁄2° দঃ) পর্যন্ত অঞ্চলের নাতিশীতোষ্ণ মন্ডলের অন্তর্গত। এই অঞ্চলের বিস্তৃত প্রায় 4800k.m

দেশ সমূহ

আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স প্রভৃতি।

বৈশিষ্ট্য

(১) এই অঞ্চলে সূর্যরশ্মি খুব তির্যকভাবে পতিত হয় না সেই জন্য বিশ্ব খুব একটা উষ্ণ এবং শীত খুব একটা শীতল হয় না।

(২) গ্রীষ্মকালের সূর্য রশ্মির পতন কোণ বৃদ্ধি পায় এবং শীতকালে কমে যায়।

৩) এই অঞ্চলের গড় উষ্ণতার পরিমাণ 0°C থেকে 27°C

(৪) উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের এই দুই অঞ্চলেকে যথা ক্রমে উত্তর নাতিশীতোষ্ণ মন্ডলদক্ষিণ নাতিশীতোষ্ণ মন্ডল বলে।

৫) দিন রাত্রি দৈর্ঘ্য সারা বছর ধরে মাঝারি থাকে তাই এখানে নাতিশীতোষ্ণ অবস্থা বিরাজ করে।

উপবিভাগ

অবস্থানের ভিত্তিতে নাতিশীতোষ্ণ মন্ডল দুই ভাগে বিভক্ত।

(i) উষ্ণ নাতিশীতোষ্ণ মন্ডলঃ সাড়ে 23 1⁄2° থেকে 45° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত। এখানে গ্রীষ্মকালীন গড় উষ্ণতা 20°C থেকে 25°C এবং শীতকালীন গড় উষ্ণতা থাকে 10°C থেকে 15°C।

(ii) শীতল নাতিশীতোষ্ণ মন্ডলঃ উভয় গোলার্ধে 45° অক্ষাংশ থেকে 66 1⁄2° অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত। এ অঞ্চলের গ্রীষ্মকালীন গড় উষ্ণতা 5°C থেকে 10°C ও শীতকালীন গড় উষ্ণতা 0°C এর নিচেও নেমে যায়

(3) হিমমন্ডল

অবস্থান

উভয় গোলার্ধে 66 1⁄2° থেকে মেরবিন্দু 90° পর্যন্ত হিমমন্ডলের অন্তর্গত।

দেশ সমূহ

আন্টার্টিকা, সাইবেরিয়া, আলাস্কা, গ্রিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড প্রভৃতি অঞ্চল

বৈশিষ্ট্য

(১) এই অঞ্চলে সূর্যরশ্মি তির্যকভাবে কিরণ দেয়ার উষ্ণতা সব সময় কম থাকে।

(২) এই অঞ্চলে দিন-রাত্রি দৈর্ঘ্য তারতম্য অত্যন্ত বেশি।

(৩) কোন কোন স্থান 1-6 মাস একটানা সূর্যরশ্মি দেখা যায় না। আবার যখন একটানা দিন বিরাজ করে তখন সূর্যরশ্মি তীর্যকভাবে পতিত হওয়ায় খুব একটা উষ্ণতা বেশি হয় না।

(৪) এই অঞ্চলের প্রায় সারা বছর বরফাবৃত থাকে, প্রায় 9 মাস শীতকালে এবং 3 মাস গ্রীষ্মকাল লক্ষ্য করা যায়।

(৫) এখানকার গড় তাপমাত্রা 0° এর কম থাকে

(৬) এই অঞ্চলে একটানা রাত্রিকালে মেরুপ্রভা লক্ষ্য করা যায়।

উপবিভাগ

অবস্থানের উপর ভিত্তি করে হিম মন্ডল দুই ভাগে বিভক্ত।
১) তুন্দ্রা অঞ্চলঃ উভয় গোলার্ধে 66 1⁄2° থেকে 75° অক্ষাংশে অবস্থিত।
স্বল্পস্থায়ী গ্রীষ্মকাল এবং গ্রীষ্মকালে এ অঞ্চলে কিছু কিছু স্থানে উষ্ণতা উপরে থাকে।

২) চির তুষারবৃত অঞ্চলঃ উভয় গোলার্ধে 75° অক্ষাংশ থেকে মেরু বিন্দু পর্যন্ত অঞ্চল। এই অঞ্চলের তাপমাত্রা সারা বছর হিমাঙ্কের নিচে বিরাজ করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *