থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রোগ যেখানে অস্বাভাবিক হিমোগ্লোবিন তৈরি হওয়ার কারণে লোহিত রক্তকণিকা ধ্বংস হয়ে যায়। হিমোগ্লোবিন রক্তের একটি বিশিষ্ট উপাদান যা রক্তকে লাল বর্ণ করে এবং রক্তে অক্সিজেন সরবরাহ করে।
থ্যালাসেমিয়া শরীরের পর্যাপ্ত হিমোগ্লোবিন তৈরি না হওয়ার কারণে অথবা ত্রুটিপূর্ণ হিমোগ্লোবিন সংশ্লেষণের কারণে ঘটে থাকে।
আলফা (α) চেন ও বিটা (β) চেনের ওপর ভিত্তি করেই থ্যালাসেমিয়াকে সাধারনত 2 ভাগে ভাগ করা হয়- আলফা (α) থ্যালাসেমিয়া ও বিটা (β) থ্যালাসেমিয়া।
আলফা (α) থ্যালাসেমিয়া
আলফা- গ্লোবিনের একটি বা একাধিক জিনের পরিবর্তনে আলফা থ্যালাসিমিয়া হয়। এর সাধারণ লক্ষণ হল হালকা থেকে মারাত্মক রক্তশূন্যতা।
- একটি জিনের পরিবর্তন ঘটলে আক্রান্ত ব্যক্তির কোনো লক্ষ্য থাকে না। এই ধরনের জিনকে আলফা-থ্যালাসিমিয়া মিনিমা বলে।
- দুটি জিনের কোন রূপ পরিবর্তন ঘটলে ব্যক্তির হালকা রক্তস্বল্পতা থাকে। এটি আলফা থ্যালাসিমিয়া মাইনর নামে পরিচিত।
- তিনটি জিনের পরিবর্তনে ব্যক্তি হিমোগ্লোবিন এইচ রোগে রোগাক্রান্ত হয়। এই রোগে চিরস্থায়ী রক্তস্বল্পতা ঘটে।
- চারটি জিনের পরিবর্তনের গর্ভস্থ শিশুর মৃত্যু ঘটে।
হিমোগ্লোবিন এইচ হাড়ের জটিলতার জন্য দায়ী। এছাড়া কপাল, গাল ও চেয়াল অতিরিক্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। বর্ধিত প্লিহা ও অপুষ্টিও এর লক্ষণ।
বিটা (β) থ্যালাসেমিয়া
বিটা গ্লোবিনের একটি বা একাধিক পরিবর্তনে বিটা থ্যালাসেমিয়া হয়।
- একটি জিনের পরিবর্তনে ব্যক্তি হালকা রক্তশূন্যতায় ভোগে। একে মাইনর বিটা থ্যালাসেমিয়া বলে।
- দুটি জিনের আংশিক পরিবর্তনে ব্যাক্তির মাঝারি রক্তশূন্যতা হয়। একে বিটা থ্যালাসেমিয়া ইন্টারমিডিয়েট বলা হয়।
- দুটি জিনের সম্পূর্ণ পরিবর্তন ঘটলে ব্যক্তি গুরুতর রক্তশূন্যতায় ভোগে। শিশুকাল থেকে বারবার রক্ত নিতে হয় এবং হাড়ের গঠন বদলে যায়। একে মেজর বিটা থ্যালাসেমিয়া বলে বা ‘কুলি’স অ্যানিমিয়াও বলা হয়ে থাকে।
আক্রান্ত শিশুদের জন্মের তিন মাস থেকে দু বছরের মধ্যে লক্ষণ গুলি দেখা যায়। বিটা থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা ক্লান্তি, দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট, মাথাঘোরা বা মাথাব্যথা সহ রক্তস্বল্পতার লক্ষণ গুলি অনুভব করে।
বিটা থ্যালাসেমিয়ার একটি বিশেষ প্রকার হল HbE -থ্যালাসেমিয়া যেটি হিমোগ্লোবিন’ ই‘ জিনের কারণে কারণে ঘটে থাকে।
থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎসা
রোগের ধরন ও তীব্রতার ওপর নির্ভর করে উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।
যেমন অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন (BNT), সম্পূরক ও ঔষধ এবং রক্ত সঞ্চালন। দুটি বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। তা হল- আয়রন যুক্ত সাপ্লিমেন্ট বা ভিটামিন এবং খনিজ গ্রহণ না করা।
সর্বোপরি বলা যায় থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধ সম্ভব নয়। যেহেতু এটি উত্তরাধিকারী সূত্রে প্রাপ্ত ব্যাধি। তবে জন্মের আগে প্রসবপূর্ব পরীক্ষার সময় ব্যাধি গুলি শনাক্ত করা সম্ভব।