মৌসুমী বায়ু কাকে বলে এবং তার বৈশিষ্ট্য

আরবি শব্দ ‘মৌসিম‘ বা মালয় শব্দ ‘মনসিন’ থেকে মৌসুমী শব্দটির উৎপত্তি যার অর্থ হল ঋতু

সংজ্ঞা

মৌসুমী বায়ু একটি সাময়িক বায়ু। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যে বায়ু প্রবাহিত হয় তাকে মৌসুমী বায়ু বলে।

ব্রিটিশ বিজ্ঞানী এডমন্ড হ্যালি সর্বপ্রথম 1686 খ্রিস্টাব্দে মৌসুমী শব্দটি ব্যবহার করেন

ভারতের জলবায়ুতে মৌসুমী বায়ুর প্রভাব অপরিসীম। তাই ভারতকে ক্রান্তীয় মৌসুমী জলবায়ুর দেশ বলে। মৌসুমী বায়ুর বৈশিষ্ট্য গুলি হল-

1. অবস্থান:

এই জলবায়ু নিরক্ষরেখা উভয়দিকে 100 থেকে 250 অক্ষরেখার মধ্যে সীমাবদ্ধ। তবে দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় 300 উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চলে এই জলবায়ুর প্রাধান্য বেশি লক্ষ্য করা যায়।

2. প্রবাহের দিক:

ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মৌসুমী বায়ু দিক পরিবর্তন করে। গ্রীষ্মকালে এই বায়ু দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে এবং শীতকালে উত্তর-পূর্ব দিক দিয়ে প্রবাহিত হয়।

3. অনিশ্চিত আগমন:

মৌসুমী বায়ুর আগমন ও প্রত্যাগমন সুনির্দিষ্ট নয়। নির্দিষ্ট সময়ের আগে বা পরে ঘটে থাকতে পারে।

4. আর্দ্র গ্রীষ্মকাল ও শুষ্ক শীতকাল:

আর্দ্র গ্রীষ্মকাল ও শুষ্ক শীতকাল মৌসুমী বায়ুর অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু জলভাগের উপর দিয়ে আসার সময় প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প আরোহন করে স্থলভাগে এসে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত ঘটায়।
কিন্তু উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ু স্থলভাগ দিয়ে ফেরার জন্য জলীয় বাষ্পের অভাবে শীতকাল প্রায় শুষ্ক থাকে।

5. সমুদ্র বায়ু ও স্থলবায়ুর বৃহৎ সংস্করণ:

এডমন্ড হ্যালির মতে মৌসুমী বায়ু হলো স্থলবায়ু ও সমুদ্র বায়ুর বৃহৎ সংস্করণ। গ্রীষ্মকালে এই বায়ু জলভাগ থেকে স্থলভাগের দিকে এবং শীতকালে ফলবাত থেকে জলভাগের দিকে প্রবাহিত হয়।

6. বৃষ্টিপাতের অসম বন্টন:

মৌসুমী বায়ুর দ্বারা সর্বত্র সমান পরিমান বৃষ্টিপাত হয় না। উদাহরণস্বরূপ- মৌসুমী বায়ুর দ্বারা একদিকে যেমন মেঘালয়ের মৌসিনরামে পৃথিবীর সর্বাধিক বৃষ্টিপাত হয় আবার রাজস্থানে খুব কম পরিমাণ বৃষ্টি হয়ে থাকে।

7. অনিয়মিত বৃষ্টিপাত:

মৌসুমী বায়ুর খামখেয়ালীপনার দরুন অধিক বৃষ্টিপাতের জন্য কোথাও বন্যা দেখা দেয়, আবার কোথাও কোথাও অনাবৃষ্টির জন্য খরা দেখা দেয়।

8. বৃষ্টিপাতের ছেদ:

দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ু দ্বারা বৃষ্টিপাত ধারাবাহিকভাবে হয় না। নিম্নচাপ কক্ষের স্থান পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টিপাতের ছেদ দেখা যায়। একে মৌসুমী বৃষ্টির ছেদ বলে।

9. উষ্ণতার পরিবর্তন:

মৌসুমী বায়ু অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো ঋতু ভেদে উষ্ণতার পরিবর্তন।

  • মৌসুমী জলবায়ু অঞ্চলে বার্ষিক গড় উষ্ণতা প্রায় 250 C।
  • এই অঞ্চলের গ্রীষ্মকালীন গড় তাপমাত্রা থাকে 270 C থেকে 320 C।
  • এই অঞ্চলের শীতকালীন গড় উষ্ণতা দাঁড়ায় 100 থেকে 220 C।

10. মৌসুমী বিস্ফোরণ:

সাধারণত মে মাসের শেষে বা জুন মাসের শুরুতে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে উত্তর পূর্ব ভারতে পশ্চিমঘাট পর্বতমালার পশ্চিম ঢালে বজ্রবিদ্যুৎ সহ মুষলধারে বৃষ্টিপাত ঘটায়। একে মৌসুমী বিস্ফোরণ বলে।

11. ঘূর্ণিঝড়:

প্রত্যাবর্তনকারী শুষ্ক মৌসুমী বায়ু ও আদ্র সমুদ্র বায়ু সংঘর্ষে ভারতে শরৎকালে ঘূর্ণিঝড় বা সাইক্লোন সৃষ্টি হয়।

মৌসুমী জলবায়ুর অঞ্চল - পৃথিবীর ক্রান্তীয় জলবায়ু অঞ্চল - চিত্র
পৃথিবীর ক্রান্তীয় মৌসুমী জলবায়ু অঞ্চল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *