যে অদৃশ্য আবরণ ভূপৃষ্ঠ থেকে উর্ধ্ব আকাশে প্রায় 10,000 km পর্যন্ত বিস্তৃত থেকে পৃথিবীকে চাদরের ন্যায় বেষ্টন করে অবস্থান করে এবং মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে আবর্তিত হয় ও পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করেছে তাকে বায়ুমণ্ডল বলে।
রাসায়নিক গঠন বা উপাদানের তারতম্য অনুসারে বায়ুমণ্ডলকে মূলত দুটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়।
1) সমমন্ডল বা হোমোস্ফিয়ার
2) বিষমমন্ডল বা হেটারোস্ফিয়ার
1) সমমন্ডল বা হোমোস্ফিয়ার
ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় 90 km উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত যে অংশে বিভিন্ন গ্যাসের অনুপাত প্রায় একই রকম থাকে, তাই এই সমবৈশিষ্ট্যপূর্ণ বায়ুমণ্ডলীয় স্তরকে সমমন্ডল বা হোমোস্ফিয়ার বলে।
হোমো (Homo) শব্দের অর্থ হল সম ও স্ফিয়ার (Sphere) শব্দের অর্থ মন্ডল বা অঞ্চল।
বৈশিষ্ট্য:
i) এই স্তরে বায়ুমন্ডলের প্রায় 99% গ্যাসীয় উপাদান বিরাজমান।
(ii) উষ্ণতা তারতম্য অনুসারে স্তরটি প্রধানত (a) ট্রপোস্পিয়ার, (b) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার ও (c) মেসোস্ফিয়ার নিয়ে গঠিত।
(iii) সমমন্ডল পৃথিবীর জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
(iv) এই স্তরে নাইট্রোজেনের পরিমাণ সব থেকে বেশি থাকে প্রায় 78.08% এবং অক্সিজেন 20.94% ও কার্বন ডাই অক্সাইড 0.03% এছাড়াও আর্গন, নিয়ন, ওজন, হিলিয়াম, হাইড্রোজেন প্রভৃতি গ্যাসের সমোদয়ে গঠিত।
(v) উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে সমমন্ডল বা হোমোস্ফিয়ারের বায়ুর ঘনত্ব হ্রাস পেতে থাকে।

2) বিষমমন্ডল বা হেটেরোস্ফিয়ার
হেটেরো (Hetero) শব্দের অর্থ হল বিষম, বৈচিত্রপূর্ণ, স্ফিয়ার (Sphere) শব্দের অর্থ মন্ডল।
হোমোস্ফিয়ারের উর্ধ্বস্তর থেকে 10,000 km পর্যন্ত বায়ুমন্ডলে বিভিন্ন গ্যাসের অনুপাত বিভিন্ন রকম থাকে। তাই এই অঞ্চলকে বিষমমন্ডল বা হেটারোস্পিয়ার বলে।
বৈশিষ্ট্য:
(i) এই স্তরটির গ্যাসীয় উপাদান বিভিন্ন অনুপাতে থাকে।
(ii) এই স্তরে বিভিন্ন গ্যাসের আণবিক ওজন অনুসারে প্রথমে ভারী গ্যাস এবং ধীরে ধীরে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশ হালকা গ্যাস অবস্থান করে।
(iii) এই স্তরের অস্তিত্ব ধরা পড়ে না।
(iv) বায়ুমণ্ডলের এই স্তরটি (a) থার্মোস্ফিয়ার (b) এক্সোস্পিয়ার (c) ম্যাগনেটোস্পিয়ার নিয়ে গঠিত।
(v) এই স্তরে জলীয় বাষ্প, ধূলিকণার অস্তিত্ব নেই বলে চলে।
শ্রেণীবিভাগ:
বিভিন্ন গ্যাসের অবস্থান অবলম্বন করে নিচ থেকে উপরের দিকে এই স্তরকে প্রধানত চারটি ভাগে ভাগ করা যায়
(১) আণবিক হাইড্রোজেন স্তর (90-200 km)
(২) পারমাণবিক অক্সিজেন স্তর (200-1,100 km)
(৩) হিলিয়াম স্তর (1,100-3,500 km)
(৪) হাইড্রোজেন স্তর (3,500-10,000 km)
- হোমোস্ফিয়ার ও হেটারোস্ফিয়ার স্তরের মধ্যবর্তী সীমারেখাকে টার্বোপজ বলে।