পৃথিবীর উপর চাঁদ ও সূর্যের মিলিত আকর্ষনে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় অন্তর সমুদ্রের জলরাশি পর্যায়ক্রমে কোনো স্থানে ফুলে ওঠাকে জোয়ার এবং কোন স্থানে নিচে নেমে যাওয়াকে ভাটা বলে।
জোয়ার ভাটার কারণ
প্রধানত দুটি কারণে জোয়ার ভাটা হয়ে থাকে-
1) পৃথিবীর উপর চন্দ্র ও সূর্যের আকর্ষণ
2) পৃথিবীর কেন্দ্রাতিক বলের প্রভাব
1) পৃথিবীর উপর চন্দ্র ও সূর্যের আকর্ষণ
মাধ্যাকর্ষ সূত্র অনুযায়ী এই মহাবিশ্বে প্রতিটি বস্তু পরস্পর পরস্পরকে আকর্ষণ করে। এই নিয়মে পৃথিবী, চাঁদ ও সূর্য পরস্পর পরস্পরকে আকর্ষণ করে। যে বস্তুর ভর যত বেশি তার আকর্ষণ বল তত বেশি আবার যে বস্তু দূরত্ব যত বেশি তার আকর্ষণ বল তত কম।
চাঁদ অপেক্ষা সূর্যের ভর প্রায় 255 লক্ষ গুণ এবং আয়তনে প্রায় 27.7 কোটি গুণ বেশি। তাই চাঁদের তুলনায় পৃথিবীর উপর সূর্যের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি বেশি হওয়ার কথা, কিন্তু সূর্য পৃথিবী থেকে প্রায় 15 কোটি কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, চাঁদ রয়েছে পৃথিবী থেকে মাত্র 3 লক্ষ 84 হাজার কিমি দূরে।
তাই সূর্যের তুলনায় চাঁদ পৃথিবীর অনেক কাছে থাকার দরুন, পৃথিবীর উপর চাঁদের মর্যাদা কত শক্তি সূর্য অপেক্ষা প্রায় 2.2 গুণ বেশি কার্যকারী।
- মূলত এই কারণে চাঁদের আকর্ষণই জোয়ারের সৃষ্টি হয় এবং সূর্যের আকর্ষণে সৃষ্ট জোয়ার প্রবল হয় না।
- চাঁদ ও সূর্যের মিলিত আকর্ষণে প্রবল ভরা জোয়ারে সৃষ্টি হয়।
2) পৃথিবীর কেন্দ্রাতিক বলের প্রভাব
পৃথিবীর আবর্তন গতির জন্য কেন্দ্রাতিক বলের সৃষ্টি হয়। কেন্দ্রাতিক বল মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বিপরীতে কাজ করে।
পৃথিবীর যেদিকে চাঁদ থাকে সেদিকে কেন্দ্রাতিক বল অপেক্ষা মাধ্যাকর্ষ বল প্রবল ক্রিয়া করে। ঠিক বিপরীত দিক তথা প্রতিপাদ স্থানে কেন্দ্রাতিক বল মধ্যাকর্ষ বল অপেক্ষা বেশি ক্রিয়াশীল হয়।
ফলে যেদিকে চাঁদ থাকে সেই স্থানে মুখ্য জোয়ার ও প্রতিপাদ স্থানে গৌণ জোয়ার দেখা দেয়।
- উপরোক্ত কারণে পৃথিবীর যে দুটি অংশে জোয়ার হয় তার সমকোণ অঞ্চলের জলতল অবনমিত হয়ে ভাটার সৃষ্টি করে।
3) অন্যান্য কারণ
তটভূমির কাছাকাছি সমুদ্রের ঢাল, জলস্তরের উঠানামা, স্বাভাবিক সময়কাল, সমুদ্র জলরাশির উষ্ণতা, জলরাশির ঘনত্ব- প্রভৃতিকেও জোয়ার ভাটা সৃষ্টির কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।
