গম চাষের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ

গম ভারতের দ্বিতীয় প্রধান খাদ্যশস্য। গ্র্যামিনি (ঘাস )পরিবারের ট্রিটিকাম (Triticum) গোত্রের অন্তর্গত গমের বিজ্ঞানসম্মত নাম – Triticum Aestivum। গম কাছে অনুকূল ভৌগলিক পরিবেশ গুলি হল-

1) প্রাকৃতিক পরিবেশ

গম প্রধানত শুষ্ক নাতিশীতোষ্ণউপক্রান্তীয় জলবায়ু অঞ্চলের ফসল। গম চাষের অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ-

i) উষ্ণতা:

150C – 200C উষ্ণতা গম চাষের পক্ষে আদর্শ। সাধারণত চাষের শুরুতে অপেক্ষাকৃত কম উষ্ণতা 150C থেকে 160C ও ফসল পাকার সময় অপেক্ষাকৃত বেশি প্রায় 180C থেকে 200C উষ্ণতার প্রয়োজন পড়ে। তবে 200C এর অধিক উষ্ণতা ও 6.50C কম উষ্ণতায় গম চাষের পক্ষে ক্ষতিকর।

ii) বৃষ্টিপাত:

গম চাষের জন্য ঘরে 50 থেকে 100 সেমি বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন। 50 সেমি বৃষ্টিপাত কম হলে উপযুক্ত জলসেচনের প্রয়োজন আবার একনাগাড়ে বেশি দিন বৃষ্টি গম চাষের ক্ষতিকর।

iii) আবহিক অবস্থা:

গম চাষের বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন প্রকার আবহাওয়া ও আর্দ্রতার প্রয়োজন পড়ে। যেমন-

  • গম চাষের প্রাথমিক অবস্থায় আদ্র ও শীতল আবহাওয়ার প্রয়োজন। এতে গম বীজের অঙ্কুোদগমের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং চারা বৃদ্ধিতে সহায়তা হয়।
  • গম চাষে দ্বিতীয় অবস্থায়, যখন গাছ থেকে শীষ বের হয়, সেই সময় উষ্ণ ও শুকনো আবহাওয়া প্রয়োজন। এই সময় বৃষ্টি হলে গমের শীষ পচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • গম চাষের তৃতীয় অবস্থায়, সামান্য বৃষ্টিপাত হলে ভালো। এতে গমের শিষ পুষ্টি লাভ করে।
  • গম চাষের চতুর্থ পর্যায়ে, অর্থাৎ গম পাকার সময়ে যথেষ্ট পরিমাণে সূর্যে তাপ প্রয়োজন পড়ে।

iv) তুহিন:

তুষারপাত গম চাষের ক্ষতি করে ফলে তুহিন মুক্ত 100 থেকে 110 দিন প্রয়োজন।

vi) ভূপ্রকৃতি:

গাছের গোড়ায় জল জমে থাকলে গম চাষের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই অতিরিক্ত জল জমি থেকে বের করে দেওয়ার জন্য ভালো জলনিকাশি ব্যবস্থা যুক্ত সামান্য ঢালু জমি গম চাষের পক্ষে আদর্শ।

vi) মৃত্তিকা:

নাইট্রোজেন, ফসফেট, পটাশযুক্ত উর্বর দো-আঁশ মাটি, বেলে দো-আঁশ মাটি, হালকা এঁটেল মাটি গম চাষের পক্ষে আদর্শ। এছাড়াও পলিমাটি ও কৃষ্ণ মৃত্তিকাতেও গম চাষ খুব ভালো হয়।

2) অর্থনৈতিক অবস্থা:

গম চাষের জন্য অনুকূল অর্থনৈতিক অবস্থা গুলি হল-

i) সুলভ শ্রমিক:

বর্তমানে যান্ত্রিক উপায়ে গম চাষে শ্রমিক কম লাগলেও বীজ বপন, আগাছা পরিষ্কার, সার ও কীটনাশক প্রয়োগের জন্য সুদক্ষ ও পরিশ্রমী শ্রমিকের প্রয়োজন পড়ে।

ii) জলসেচ:

ভারতে সাধারণত শীতকালে শুষ্ক আবহবায় গম চাষ করা হয় বলে বৃষ্টিপাতের স্বল্পতার জন্য জলসেচ অবশ্য প্রয়োজন।

iii) মূলধন:

উন্নত বীজ, সার, কীটনাশক, ও উন্নত কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহারের জন্য প্রচুর মূলধনের প্রয়োজন।

iv) চাহিদা ও বাজার:

উত্তর পূর্ব ভারতে গমের বিপুল চাহিদা থাকার দরুন ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজার যথেষ্ট ভালো।

  • উত্তর ও উত্তর-পূর্ব ভারতে সর্বাধিক গম চাষ হয়ে থাকে। উত্তরপ্রদেশ গম উৎপাদনে ভারতে শীর্ষস্থান অধিকার করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *