সমসংস্থ অঙ্গ
জীবদেহের যেসব অঙ্গ উৎপত্তি এবং গঠনগত দিক থেকে এক হলেও কার্যগত দিক থেকে আলাদা তাদের সমসংস্থা অঙ্গ বলে।
উদাহরণ
প্রাণীর সমসংস্থা অঙ্গ: বাদুড়ের ডানা, পাখির ডানা, ঘোড়ার অগ্রপথ, মানুষের হাত, তিমির ফ্লিপার, শীলের প্যাডেল ইত্যাদি সমসংস্থ অঙ্গের উদাহরণ।
উদ্ভিদের সমসংস্থ অঙ্গ: বেলের শাখা কন্টক, আদার গ্রন্থি কান্ড, আলুর স্ফীতকন্দ ঝুমকো লতার আকর্ষ, ফণিমনসার পর্নকাণ্ড ইত্যাদি।
জৈব অভিব্যক্তিতে অঙ্গ সমসংস্থ অঙ্গঘটিত প্রমাণের তুলনামূলক আলোচনা:
প্রাণীর ক্ষেত্রে
ব্যাঙ, গিরগিটি, ঘোড়া, তিমি, বিড়াল, বাদুড়, মানুষ প্রভৃতি প্রাণীর অগ্রপথ বিভিন্ন প্রকার কাজ করলেও গঠনগত দিক থেকে অঙ্গ গুলি মোটামুটি ভাবে একই ধরনের। বিভিন্ন পরিবেশে থাকার কারণে এদের অগ্রবাদের পরিবর্তন ঘটেছে। যেমন পাখির অগ্রপথ (ডানা) ওড়ার জন্য, মাছের অগ্রপথ (ফ্লিপার) সাঁতার কাটার জন্য এবং মানুষের অগ্রপথ (হাত) সৃজনশীল কাজের জন্য বিভিন্নভাবে পরিবর্তিত হয়েছে।
এই সকল অঙ্গগুলির গঠন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় প্রত্যেক অগ্রগতি উপরের দিকে থাকে হিউমেরাস তারপর থাকে রেডিয়াস-আলনা, কারপল ও মেটাকারপল নামে হাড় সমূহ। এছাড়াও প্রতিটি ক্ষেত্রে থাকে একই ধরনের পেশি, স্নায়ু ও রক্তনালিকা।
সুতরাং সমসংস্থ অঙ্গ গুলি উপচর শ্রেণীর প্রাণী ব্যাঙ থেকে শুরু করে সরীসৃপ, পাখি, স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপন করে। অর্থাৎ এর থেকে প্রমাণিত হয়, সব মেরুদন্ডী প্রাণী একই প্রকার উদবংশীয় জীব থেকে উদ্ভব হয়েছে।
উদ্ভিদের ক্ষেত্রে
উদ্ভিদের মধ্যে পাতার সরল ও যৌগিক প্রকৃতি, আঁশের আকৃতি, কাঁটায় রূপান্তর ও আকর্ষ সৃষ্টি সমসংস্থ অঙ্গের উদাহরণ। এই উদাহরণগুলি থেকে বোঝা যায় যে উদ্ভিদগুলি উৎপত্তিগত ভাবে এক হলেও প্রাকৃতিক পরিবেশে অভিযোজিত হওয়ার ফলে অঙ্গগুলির কাজ ও বহিরাকৃতি পরিবর্তন ঘটেছে। সুতরাং একই উদবংশীয় জীব থেকে সৃষ্ট জীবগোষ্ঠী বিভিন্ন পরিবেশে অভিযোজনের কারণে কার্যগত এবং বাহ্যিক গঠনগত দিক থেকে বিভিন্ন হয়।
মন্তব্য
সমসংস্থ অঙ্গ গুলির প্রতি এবং গঠনগত মিল দেখে বোঝা যায় যে জীবগুলি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত শুধুমাত্র ভিন্ন পরিবেশে বসবাস করার ফলে তাদের অঙ্গগুলির বাহ্যিক কিছুর বিবর্তন ঘটেছে। এই ধরনের বিবর্তন অপসারী বিবর্তন কে সমর্থন করে অর্থাৎ একই উদবংশীয় জীব থেকে উৎপত্তি লাভ করেও ভিন্ন পরিবেশে অভিযোজিত হওয়ার ফলে বিভিন্ন জীবের মধ্যে আলাদা আলাদা বিবর্তন দেখা যায় (অপসারী বিবর্তন)।