জীববৈচিত্র্যের  গুরুত্ব

পৃথিবীতে নানা ধরনের জীব বিরাজমান। আবার একই জীব প্রজাতি পরিবেশের তারতম্যের কারণে ভিন্ন রূপে দেখতে পাওয়া যায়।

জীবেদের এই বৈচিত্র্য মানব সভ্যতাকে নানাভাবে উপকৃত করে চলেছে। নীচে জীববৈচিত্র্যের প্রয়োজনীয়তা গুলি আলোচনা করা হল-

১. কৃষি ক্ষেত্রে প্রভাব

জীববৈচিত্র্যের কারণে কৃষি ক্ষেত্রে বৈচিত্র্যতা দেখতে পাওয়া যায়। যা উন্নত মানের ফসল উৎপাদনে সাহায্য করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে ধান চাষে বিভিন্ন ভ্যারাইটির শস্য বীজ ব্যবহার করা হয়, যার ফলে অধিক পরিমাণে ধান উৎপাদন সম্ভব হয়েছে।

২. খাদ্যের উৎস হিসাবে

মানুষ খাদ্যের জন্য উদ্ভিদ ও প্রাণীর উপর নির্ভরশীল। ধান, গম, ভুট্টা ইত্যাদি থেকে আমরা শস্য উৎপাদন করি। গরু, ছাগল, ভেড়া ও মুরগি প্রভৃতি থেকে মাংস এবং হাঁস ও মুরগি থেকে ডিম পেয়ে থাকি। জীববৈচিত্র্যের কারণেই বিশাল সংখ্যক মানুষের খাদ্যের চাহিদা পূরণ সম্ভব হয়েছে।

৩  ড্রাগ ও ওষুধ প্রস্তুতিতে

উদ্ভিদ থেকে আমরা যে শুধু খাদ্য পাই তা নয়। মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষা এবং রোগ নিরাময়ে ভেষজ উদ্ভিদের গুরুত্ব অপরিসীম। নিম, তুলসী, বাসক প্রভৃতির রোগ নিরাময় ক্ষমতা আছে। কুইনাইন, মরফিন, ট্যাক্সল (যা ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়) এর মত গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ আমরা উদ্ভিদ থেকে পাই।

এছাড়াও বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া থেকে গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিবায়োটিক (টেট্রাসাইক্লিন, স্ট্রেপ্টোমাইসিন) প্রস্তুত করা হয়। আর্মাডিলো নামক প্রাণী কুষ্ঠ রোগের গবেষণার কাজে ব্যবহৃত হয়।

৪. জিন ভান্ডার

জীববৈচিত্র্যের অর্থই হল অসংখ্য নানা ধরনের জিনের সমাহার। যা মানুষকে বিভিন্ন গবেষণার সুযোগ করে দিয়েছে। জীবপ্রযুক্তিবিদ্যা প্রয়োগ করে আজকাল জিন থেকেই ট্রান্সজেনিক উদ্ভিদ ও প্রাণী তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। ট্রান্সজেনিক ভেড়া থেকে মাংস এবং পশমের চাহিদা পূরণ হয়।

৫. বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষায়

বাস্তুতন্ত্রে সকল প্রকার জীবই একে অন্যের উপর নির্ভরশীল। যদি কোন প্রজাতির সংখ্যা অত্যাধিক কমে গেলে অথবা বেড়ে গেলে বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়। খাদ্য ও খাদকের মাধ্যমে বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় থাকে।

৬.  জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ

আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রা কমাতে জীববৈচিত্র্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও জীববৈচিত্রের প্রাচুর্যতা পরিবেশ ও জলবায়ুর স্থিতাবস্থা অবস্থা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

উদ্ভিদেরা সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে এবং অক্সিজেন বর্জন করে। ফলে পরিবেশে অক্সিজেন এবং কার্বন ডাই অক্সাইডের সাম্যবস্থা বজায় থাকে।

৭. অর্থনৈতিক গুরুত্ব

জীব বৈচিত্র্যের অর্থনৈতিক মূল্য অপরিসীম। একটি দেশের জীববৈচিত্র্যেই সেই দেশের মূল্যবান সম্পদ ও সমৃদ্ধির পরিচায়ক।

গৃহ সামগ্রী ও আসবাবপত্র তৈরির জন্য সাল, সেগুন, গামার প্রভৃতি গাছ ব্যবহার করা হয়। তাই এই সকল গাছের অর্থনৈতিক গুরুত্ব যথেষ্ট। পাইন গাছ থেকে রজন পাওয়া যায়, যা বার্নিশ শিল্পে এবং রং তৈরিতে প্রয়োজন হয়। সামুদ্রিক ঝিনুক থেকে মূল্যবান মুক্ত পাওয়া যায়।

এছাড়াও মূল্যবান উদ্ভিদ ও বন্যপ্রাণী বিদেশে রপ্তানি করেও বৈদেশিক মুদ্রা লাভ করা সম্ভব।

৮.  শিল্প ও সাহিত্যে প্রভাব

নানান ধরনের জীব, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং নৈসর্গিক দৃশ্য আমাদের মনে নির্মল আনন্দে সৃষ্টি করে। প্রাচীন কাল থেকেই বিভিন্ন কবিতা, গল্প এবং কাব্যে বন এবং বন্যপ্রাণীর পরিচয় পাওয়া যায়।

সারাবছর প্রচুর মানুষ জীব বৈচিত্র্য সমৃদ্ধ স্থান গুলিতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য ভ্রমণ করেন। ফলে পর্যটন শিল্পের সমৃদ্ধি ঘটে।

৯. নৈতিক মূল্য

পৃথিবীতে প্রত্যেক জীবেরই বেঁচে থাকার অধিকার আছে। বিভিন্ন জীব বিভিন্ন ধরনের ভূমিকা পালন করে। তাই ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিও শহরে বসুন্ধরা সম্মেলনে জীব বৈচিত্র্যের গুরুত্ব এবং সংরক্ষণ সম্বন্ধে বিশেষ কর্মসূচি গৃহীত হয়।

জীববৈচিত্র্যের কি - গুরুত্ব
জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *