আর্কিমিডিসের সূত্র আবিষ্কারের কাহিনী

সময়টা ২৮৭– ২১২ b.c.

গ্রীস দেশে সিরাকিউজ নামে এক ছোট্ট রাজ্য ছিল। সেখানকার রাজা ছিলেন হিয়ারো। তিনি ছিলেন খুবই খামখেয়ালী এবং খিটমিট স্বভাবের। চারিপাশে আত্মীয় পরিজন মন্ত্রী, সেনাপতি সবাইকেই তিনি সন্দেহের চোখে দেখতেন।

তিনি যে মুকুটটি পড়তেন সেটি তার ভীষণ অপছন্দের ছিল। তাই তিনি ঠিক করলেন একটি নতুন সুন্দর মুকুট বানাবেন। তাই তিনি দেশের সেরা স্যাকরা কে ডেকে পাঠালেন।

বুড়ো স্যাকরা আসতে রাজা হিয়ারো তাকে বললেন যে তাকে একটি সুন্দর মুকুট তৈরি করে দিতে হবে। মুকুটটি হবে সোনার। মুকুটটি এতই সুন্দর করতে হবে যে দুনিয়ার সমস্ত রাজা সেটি দেখে যেন প্রশংসা করে। এবং কাজটি করতে হবে সাত দিনের মধ্যে।

স্যাকরা রাজাকে বললেন যে তার মান রাখতে তিনি সর্বোত্তম চেষ্টা করবেন।

সাত দিন পর বুড়ো স্যাকরা একটি খুব সুন্দর মুকুট তৈরি করে এনে রাজা কে দিলেন। সভা সভাপতিরা, মন্ত্রী এবং অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিরা সেই মুকুটটি দেখে অভিভূত হলেন। রাজাও মুকুটটির কারুকার্য দেখে খুব খুশি হলেন। খুশি হয়ে তিনি স্যাকরাকে নানা উপহার দিলেন।

কিন্তু কিছুদিন পর রাজার মনে হঠাৎ এক সন্দেহ আবির্ভূত হলো। তিনি ভাবলেন- স্যাকরা এই মুকুটিতে খাদ মেশায় নি তো ?

সন্দেহ হতেই তিনি তৎক্ষণাৎ মন্ত্রী কে ডাকলেন। এবং বললেন এই মুকটটিকে ঠিকঠাক পরীক্ষা করে দেখতে। এতে খাদ মেশানো আছে না এটি নিখাদ সোনা দিয়ে তৈরী?

মন্ত্রী দেশের নানা পণ্ডিতদের দেখে শলাপরামর্শ করলেন। কিন্তু কেউ কোনো ভালো উপায় বলতে পারলেন না।তখনও সোনা থেকে খাদ যাচাই করার পদ্ধতি আবিষ্কার হয়নি।

তখন দেশের সবথেকে বিখ্যাত পন্ডিত ও বিজ্ঞানী আর্কিমিডিসকে ডাকা হল।

রাজামশাই-এর সব কথা শুনে বিজ্ঞানী আর্কিমিডিস অবাক হয়ে গেলেন। তিনিও জানতেন না খাঁটি সোনা চেনার উপায়। তবুও তিনি সরাসরি রাজাকে না বললেন না।  তিনি বললেন তিনি সর্বোত্তম চেষ্টা করবেন। রাজা তাকে একমাস সময় দিলেন। আর এই এক মাসের মধ্যে আর্কিমিডিস যদি কোন উপায় বের করতে না পারে তাহলে তাকে মৃত্যুবরণ করতে হবে।

আর্কিমিডিসের সূত্র আবিষ্কার

অতএব আর্কিমিডিস পড়লেন মহা মুশকিলে। তিনি চিন্তা করতে লাগলেন কি উপায়ে খাঁটি সোনা চেনা যাবে। তার দুশ্চিন্তা বাড়তে লাগল। নাওয়া খাওয়া ভুলে গেলেন। লোকের সঙ্গে মেলামেশা বন্ধ করে দিলেন। শুধু দিনরাত চিন্তা করতে লাগলেন কিভাবে ব্যাপারটি সমাধান করা যাবে।

আর্কিমিডিস একটি বড় চৌবাচ্চায় স্নান করতেন। ওই ঘটনার পর একদিন তিনি চৌবাচ্চায় স্নান করতে করতে রাজার মুকুটটির কথা ভাবছিলেন। হঠাৎ চৌবাচ্চার জলের দাগের ওপর আর্কিমিডিসের চোখ পড়ে। তিনি দেখলেন স্নানের আগে দলের দাগ যেখানে ছিল তা অনেকটা উপরে উঠে এসেছে। এমনকি নিজের শরীরটাও তার বেশ হালকা লাগছিল। তিনি মনে মনে ভাবলেন কোন বস্তুকে জলে ডোবালে সে কিছুটা না কিছুটা জল অপসারণ করবে। এই অপসারিত জলের ওজন আর বস্তুর ওজনের তুলনা করলেই বস্তুর ঘনত্ব পাওয়া যাবে। আর এভাবেই তিনি সোনার মুকুট এ খাদ মেশানো আছে কিনা তার উপায় বের করবার পথ পেয়ে যাবেন।

এ কথা ভেবে আর্কিমিডিস আনন্দে আত্মহারা হয়ে ইউরেকা ইউরেকা বলে চিৎকার করতে করতে রাজামশাই এর কাছে ছুটে গেলেন।

রাজামশাইকে আর্কিমিডিস বললেন সোনার মুকুট, একটি জলভরা পাত্র, কিছু পরিমাণ খাঁটি সোনা দিতে।

এবার আর্কিমিডিস সোনার মুকুটতিব ওজন করলেন। তারপর সেটিকে জলে ডুবিয়ে তার অপসারিত জলে ওজন নিলেন। এবং ওই দুই ওজনের তুলনা করে মুকুটটির ঘনত্ব বের করলেন।

এবার ওই খাঁটি সোনাকে ওজন করে, জলে ডুবিয়ে তার অপসারিত জলের ওজন করলেন। সোনার ঘনত্ব বের হল। এভাবে তিনি খাটি সোনার ঘনত্ব সঙ্গে মুকুটের সোনার ঘনত্বের তফাৎ দেখিয়ে প্রমাণ করে দিলেন সোনার মুকুটটিতে খাদ মেশানো আছে।

এভাবে বিজ্ঞানী আর্কিমিডিস আবিষ্কার করলেন এক সূত্র ” কোন বস্তুকে সম্পূর্ণ বা আংশিক রূপে জলে বা অন্য কোন তরলে নিমজ্জিত করলে বস্তু তার নিজো আয়তনের সমান জল বা তরল অপসারণ করে। নিমজ্জিত করার ফলে বস্তুর যে পরিমান ওজন হ্রাস পায় অপসারিত জলের ওজন ঠিক ততোখানি।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *