ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যরা শুরুর সময়কাল থেকেই কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণীর উন্নতির জন্য সচেষ্ট ছিলেন। শুধু তাই নয়, তারা এই দুই শ্রেণীকে জাতীয় আন্দোলনের মূলধারায় শামিল করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ভারত সরকারের এক রিপোর্ট থেকে জানা যায়- শ্রমিক শ্রেণীর মধ্যে সাম্যবাদী আদর্শের উদ্ভব ও প্রচার সরকারের জন্য গভীর চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
পেক্ষাপট
১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে ভারতের মাটিতে কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ দেশের শ্রমিক আন্দোলনে বামপন্থী মনোভাবের অনুপ্রবেশ সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। ভারতের শ্রমিক আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দিতে ব্রিটিশ সরকার যেসব প্রয়াস নিয়েছিল মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা ১৯২৯ তার মধ্যে অন্যতম।
ব্রিটিশ দমন নীতি
১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে কলকাতায় জাতীয় কংগ্রেসে বার্ষিক অধিবেশনে কমিউনিস্ট দলের নেতৃত্বের প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক যোগ দেয় এবং ঘোষণা করে যে, পূর্ণ স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রই তাদের লক্ষ্য। এভাবে কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে এ দেশের শ্রমিক আন্দোলন কংগ্রেসি আন্দোলনের চেয়েও চরমপন্থী হয়ে ওঠায় সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ সরকারের মনে প্রবল ত্রাসের সঞ্চার হয়।
মামলার রায়
এই মামলায় মোট ৩৩ জন শ্রমিক নেতা বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। মামলার রায় এ কমিউনিস্ট দলের সমস্ত প্রকার কাজ নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করা হয়। এই মামলায় যেসব নেতাদের দীর্ঘ কারাবাস হয় তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন- মুজাফফর আহমেদ, শিবনাথ ব্যানার্জি, ধরণী গোস্বামী, শ্রীপাদ অমৃত ডাঙ্গে, পি সি যশি, গঙ্গাধর অধিকারী প্রমুখ।
উপসংহার
শ্রমিক আন্দোলনকে দমন করতে সরকার শিল্প বিরোধ বিল, জনো নিরাপত্তাবিন ইত্যাদি শ্রমিক স্বার্থ বিরোধী আইন প্রণয়ন করে। ওই দমননীতিরই একটি প্রয়াস হিসেবে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা ভারতের শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে। পন্ডিত নেহেরু এই মামলাকে শ্রমিক আন্দোলনের প্রতি সরকারের আক্রমণাত্মক নীতি বলে উল্লেখ করেন।