পর্যায় সারণী রচনায় মেন্ডেলিফের অবদান

রাশিয়ান বিজ্ঞানী দিমিত্রি ইভামোভিচ মেন্ডেলি পর্যায় সারণির প্রাথমিক বিকাশে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন।

1869 সালে মেন্ডেলিফের প্রস্তাবিত সূত্রে বলা হয়েছে যে, ‘ মৌলগুলির ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মাবলি তাদের পারমাণবিক ভর বৃদ্ধির সাথে পর্যায়ক্রমে পুনরাবৃত্ত হয়।’

মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণিতে মোট সাতটি পর্যায় ও আটটি শ্রেণী আছে। অনুভূমিকভাবে বিন্যস্ত সারিগুলিকে পর্যায় বলা হয় এবং উলম্বভাবে বিন্যস্ত কলামগুলিকে শ্রেণি বলা হয়।

মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণীর বৈশিষ্ট্য

পর্যায় সারণী যে সাতটি অনুভূমিক সারিতে বিন্যস্ত, প্রতিটির সংখ্যা 1 থেকে 7 অবধি

প্রতিটি উলম্ব স্তম্ভকে 1 থেকে 8 অবধি সংখ্যা প্রদত্ত করা হয়েছে।

সাধারণ উপাদান গুলিকে I থেকে VII গ্রুপে শ্রেণিবদ্ধ করা হয় ও রূপান্তর উপাদানকে VIII গ্রুপে।

তাঁর নির্দেশিত পর্যায় সারণীতে 63 মৌলকে তিনি স্থান দিয়েছিলেন। (তখনও অবধি 63 মৌলের কথাই জানা গেছিলো)

প্রতিটি মৌলের ধর্ম অধ্যয়ন করার পর মেন্ডেলিফ দেখেন যে মৌলের ধর্ম পর্যায়ক্রমে পারমাণবিক ভরের সঙ্গে সম্পর্কিত। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য সেই সময়ে পারমাণবিক সংখ্যা অজানা ছিল।

মৌলগুলির পারমাণবিক ভর বৃদ্ধির ক্রম অনুসারে সাজানো হলে দেখা যায়, একই ধর্মের মৌলগুলো নিয়মিত ব্যবধানে পুনরাবৃত্তি হয়।

পর্যায় সারণী রচনায় মেন্ডেলিফের অবদান - মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণী
মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণী

অবদান ও গুরুত্ব

মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণী রসায়নের ইতিহাস অন্যতম সেরা কৃতিত্ব যার উপর ভিত্তি করে আধুনিক পর্যায় সারণী চিত্রটি প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হয়েছে।

তৎকালীন মৌল/ উপাদানগুলির অধ্যয়ন সহজতর হয়েছে। ধাতব ও অধাতব ধর্ম নির্ধারণ করা সম্ভব এই পর্যায়ে সারণির মাধ্যমে।

মেন্ডেলিফ অনাবিস্কৃত উপাদানগুলির জন্য সফল ভবিষ্যৎবাণী করতে সক্ষম হয়েছিলেন, মোট 18 টি মৌলের ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন, যার মধ্যে 9 আবিষ্কৃত মৌলের সাথে মিলে যায়।

মেন্ডেলিফযের অনাবিষ্কৃত উপাদান গুলির জন্য তিনটি ফাঁকা স্থান রেখেছিলেন।
যাদের তিনি নামকরণ করেছিলেন একা-বোরণ, একা-অ্যালুমিনিয়াম ও একা-সিলিকন নামে, ইহারা পরবর্তীকালে যথাক্রমে গ্যালিয়াম, স্ক্যানডিয়াম ও জার্মেনিয়াম নামে পরিচিত হয়।

মেন্ডেলিফের সূত্রের সাহায্যে মৌলের রসায়নিক বন্ধন বোঝা সম্ভব।

মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণী মৌলের পারমাণবিক ভর সংশোধন করতে সাহায্য করে। যেমন- বেরিলিয়ামের পারমাণবিক ভর 13.5 থেকে 9.0 এ সংশোধন করা হয়েছিল। অনুরূপভাবে ইন্ডিয়ান সোনা ও প্লাটিনামের পারমাণবিক ভরও সংশোধন করা হয়েছে।

মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণির ত্রুটি

সর্বশেষে বলতে পারা যায় মেন্ডেলিফ প্রস্তাবিত পর্যায় সারণী তার বর্ণনামূলক ক্ষমতার জন্য ও অবশেষে উপাদান গুলির মধ্যে সম্পর্ককে সুশৃংখল করার জন্য সমাদৃত হয়েছে। যদি এই সমাদর সার্বজনীন ছিল না। কিছু ত্রুটিও ছিল যেমন-

(1) মেন্ডেলি পর্যায় সারণিতে হাইড্রোজেনকে খুঁজে পাননি।

(2) এক মৌল থেকে অন্য মৌলে স্থানান্তরের সময় পারমাণবিক ভরের বৃদ্ধি নিয়মিত ছিল না।

(3) মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণিতে আইসোটোপগুলির জন্য আলাদা কোন স্থান ছিল না।

(4) ল্যান্থানাইড (Lanthanides) ও অ্যাক্টিনাইড (Actinides) এই মৌলগুলি পর্যায় সারনীর মূল অংশে অনুভুক্ত করা হয়নি ও তাদের অবস্থানও স্পষ্ট ছিল না।

মেন্ডেলিফ এই ত্রুটিগুলি সংশোধনের মাধ্যমে আধুনিক পর্যায় সারণির ভিত্তি তৈরি হয়েছে।

1913 সালে বিজ্ঞানী হেনরি মোসলে মেন্ডেলিফের পর্যায সারণীর সংশোধন রূপটি প্রকাশ করেন।

মৌলগুলি ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মাবলী তাদের পারমাণবিক সংখ্যা অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে আবর্তিত হয়।

বর্তমান পর্যায় সারণীতে নোবেল গ্যাসগুলি গ্রুপ-18 নামে একটি পৃথক গ্রুপে রাখা হয়েছে।

আইসোটোপ ও আসল মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা এক, তাই আইসোটপকে আসল মৌলের সাথেই রাখা হয়েছে। হাইড্রোজেনকে 1 নং গ্রুপে রাখা হয়েছে।

2010 সাল পর্যন্ত মোট 118 টি উপাদান আবিষ্কৃত হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *