মেন্ডেলের এক সংকর জনন পরীক্ষা

একই প্রজাতির একজোড়া বিপরীত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন দুটি জীবের মধ্যে জনন সম্পাদিত হলে তাকে বলে একসংকর জনন।

এক সংকর জননের উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে লম্বা বৈশিষ্ট্য ও বেঁটে বৈশিষ্ট্যযুক্ত দুটি মটর গাছের মধ্যে সংকরায়ন।

বিজ্ঞানী মেন্ডেল তার 120 ফুট লম্বা এবং 20 ফুট চওড়া বাগানে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যযুক্ত মটর গাছের উপর এই সংকরায়নের পরীক্ষাগুলি করেছিলেন। মেন্ডেল মটর গাছের 7 জোড়া বিপরীত ধর্মী বৈশিষ্ট্যের বংশানুক্রমিক প্রকাশ দেখার জন্য পৃথক ভাবে এক একটি চরিত্র নিয়ে এক সংকর জননের পরীক্ষা করেন।

উদ্ভিদের এক সংকর জনন পরীক্ষা

মেন্ডেল তার একসংকর জনন পরীক্ষার জন্য বিশুদ্ধ বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন একটি লম্বা (TT) মটর গাছের সঙ্গে একটি বিশুদ্ধ বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন বেঁটে (tt) মটর গাছ নির্বাচন করেন।

পরীক্ষাটি শুরু করার আগে তিনি স্ত্রী ফুল হিসেবে নির্বাচিত ফুলটি থেকে অপরিণত অবস্থায় সমস্ত পুংকেশর বিচ্ছিন্ন করে দেন। এর ফলে স্বপরাগ যোগ ঘটার সম্ভাবনা আর থাকে না।

তারপর পুরুষ ফুলের পুংরেণু স্ত্রী ফুলের গর্ভমুন্ডের ওপর স্থাপন করে সংকরায়ন ঘটান।

প্রথম অপত্য জনু

বিশুদ্ধ লম্বা (TT) এবং বিশুদ্ধ বেঁটে (tt) মটর গাছের মধ্যে ইতর পরাগযোগ ঘটানোর কারণে উৎপন্ন বীজ থেকে প্রথম অপত্য জনুতে (F2) যে সমস্ত মটর গাছ উৎপন্ন হয়েছিল তার সবকটিই ছিল লম্বা বৈশিষ্ট্যের (Tt)।

দ্বিতীয় অপত্য জনু

মেন্ডেল প্রথম অপত্য জনুতে উৎপন্ন সবকটি মটর গাছের মধ্যে স্বপরাগ যোগ ঘটিয়ে পরবর্তী বংশধর তৈরি করেন যা তিনি দ্বিতীয় অপত্য জনু (F2) নামে অভিহিত করেন। দ্বিতীয় অপত্য জণুতে দেখা যায় সমস্ত মটর গাছগুলির মধ্যে তিন ভাগ (75%) ছিল লম্বা বৈশিষ্ট্যের (TT ও Tt) এবং বাকি এক-ভাগ (25%) ছিল বেঁটে বৈশিষ্ট্যের (tt)।

দ্বিতীয় অপত্য জনুর ফিনোটাইপ অনুপাত হল 3:1 (তিন ভাগ লম্বা এবং এক-ভাগ বেঁটে) এবং জিনোটাইপিক অনুপাত 1:2:1 অর্থাৎ এক ভাগ বিশুদ্ধ লম্বা (TT), দুই ভাগ সংকর লম্বা (Tt) এবং একভাগ বিশুদ্ধ বেঁটে (tt)।

মেন্ডেলের - উদ্ভিদের এক সংকর জনন চিত্র
উদ্ভিদের এক সংকর জনন

সিদ্ধান্ত

জীবদেহের প্রতিটি বংশগত বৈশিষ্ট্যের জন্য পৃথক পৃথক জিন দায়ী। মেন্ডেল সেই জিন গুলিকে Factor (যেমন লম্বা T, এবং বেঁটে t) হিসেবে নামকরণ করেন। এই বৈশিষ্ট্যগুলি (জিনগুলি) সংকর জীবে কখনোই পরস্পর মিশে যায় না পৃথকভাবে পাশাপাশি অবস্থান করে। এর ফলে পরবর্তী প্রজন্মে বৈশিষ্ট্যগুলি গ্যামেট উৎপাদনের সময়ে পুনরায় পৃথক হয়ে যায়। মেন্ডেলের মটর গাছের এক সংকর জনন পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে অর্থাৎ এই সিদ্ধান্তটি প্রথম সূত্র বা পৃথকী ভবন সূত্র (low of segregation) নামে পরিচিত।

প্রাণীর  একসংকর জনন পরীক্ষা

এক সংকর জনন বিভিন্ন প্রাণীর ক্ষেত্রে ঘটালেও মেন্ডেলের সূত্রের সাপেক্ষে প্রমাণ পাওয়া যায়। এখানে গিনিপিগের এক সংকর জনন আলোচনা করা হলো।

একটি বিশুদ্ধ কালো লোমযুক্ত পুরুষ গিনিপিগের (BB) সঙ্গে একটি বিশুদ্ধ সাদা লোমযুক্ত স্ত্রী গিনিপিগের (bb) সংকরায়ন ঘটালে প্রথম অপত্য জনুতে (F1) সব গিনিপিক কালো লোম যুক্ত (Bb সংকর কালো) হবে। এক্ষেত্রে গিনিপিকের কালো লোমযুক্ত রং (B) সাদা লোমযুক্ত রঙের (b) উপর প্রকট।

প্রথম অপত্য জনুর একটি পুরুষ ও একটি স্ত্রী গিনিপিগের সংকরায়ন ঘটালে (উভয়ই সংকর কালো) দ্বিতীয় অপত্য জনুতে (F2) তিন ভাগ কালো এবং একভাগ সাদা লোমযুক্ত গিনিপিকের সৃষ্টি হয়। তিন ভাগ কালো লোমযুক্ত গিনিপিক -এর মধ্যে একভাগ বিশুদ্ধ কালো (BB) এবং বাকি দু-ভাগ সংকর কালো (Bb) হবে। সাদা গিনিপিগুলি বিশুদ্ধ সাদা (bb) হবে।

সুতরাং গিনিপিকের এক সংকর  জনন পরীক্ষায় ফিনোটাইপ অনুপাত হলো- কালো : সাদা = 3 : 1 এবং জিনোটাইপ অনুপাত হলো- বিশুদ্ধ কালো : সংকর কালো : বিশুদ্ধ সাদা = 1 : 2 : 1

মেন্ডেলের - প্রাণীদের এক সংকর জনন চিত্র
প্রাণীদের এক সংকর জনন

সিদ্ধান্ত

উপরের পরীক্ষার ফলাফল থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় যে, পরীক্ষার ফলাফল মেন্ডেলের একসংকর জনন পরীক্ষার ফলাফলের অনুরূপ অর্থাৎ মেন্ডেলের প্রথম সূত্রটি অনুসৃত হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *