মাইটোসিস কোষ বিভাজন কাকে বলে?
যে জটিল ও ধারাবাহিক কোশবিভাজন প্রক্রিয়ায় একটি পরিণত দেহ মাতৃকোশের নিউক্লিয়াস এবং সাইটোপ্লাজম একবার মাত্র পরোক্ষ বিভাজনের মাধ্যমে বিভাজিত হয় এবং সমআকৃতি,সমগুন ও সমসংখ্যক ক্রোমোজোম সহ দুটি অপত্য কোশ সৃষ্টি হয় তাকে মাইটোসিস কোষ বিভাজন বলে।
মাইটোসিস কোষ বিভাজন এর বিভিন্ন দশা গুলি
মাইটোসিস কোশ বিভাজন ২ টি ভাগে বিভক্ত। ক্যারিওকাইনেসিস এবং সাইটোকাইনেসিস।
A) ক্যারিওকাইনেসিস :
মাইটোসিস কোশ বিভাজনের নিউক্লিয়াস বিভাজন পদ্ধতিকে ক্যারিওকাইনেসিস বলে।
B) সাইটোকাইনেসিস :
সাইটোপ্লাজম বিভাজন পদ্ধতিকে সাইটোকাইনেসিস বলে।
A) ক্যারিওকাইনেসিস দশা
(মাইটোসিস কোষ বিভাজনের প্রোফেজ, মেটাফেজ, অ্যানোফেজ, টেলোফেজ দশার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা)
মাইটোসিসের ক্যারিওকাইনেসিসের চারটি দশা হলো প্রোফেজ,মেটাফেজ, অ্যানোফেজ এবং টেলোফেজ।
1) প্রোফেজ :
(i) এটি নিউক্লিয়াস বিভাজনের প্রথম ও দীর্ঘতম দশা।
(ii) প্রোফেজের শুরুতে নিউক্লিয়াসের জল বিয়োজনের ফলে ক্রোমাটিন সূত্র কুন্ডলিকৃত হয়ে ছোটো ও মোটা হয় এবং নির্দিষ্ট সংখ্যক ক্রোমোজম সৃষ্টি করে।
(iii) প্রতিটি ক্রোমোজোম সেন্ট্রোমিয়ার অঞ্চল ছাড়া লম্বালম্বি বিভাজিত হয়ে ক্রোমাটিড গঠন করে।
(iv) প্রতিটি ক্রোমোজোমের ক্রোমাটিডদ্বয় পরস্পর কে পেঁচিয়ে অবস্থান করে। প্যাঁচানো অবস্থাকে পেক্টোনোমিক কুন্ডলি এবং এই পদ্ধতিকে স্পাইরাইলেজেশন বলে।
(v) প্রফেজ দশা চলাকালীন নিউক্লিওলাস গঠনকারী বস্তু গঠন ধরে না রাখতে পেরে অবলুপ্ত হয়। শেষের দিকে নিউক্লীয় পর্দাও ধীরে ধীরে অবলুপ্ত হয়।
(vi) প্রানীকোশের ক্ষেত্রে সেন্ট্রোজোমের সেন্ট্রিওল দু-ভাগে ভাগ হয়ে ২ টি সেন্ট্রিওল গঠন করে এবং কোশের উভয় মেরুতে অবস্থান করে। নতুন সেন্ট্রিওলকে ঘিরে অ্যাস্ট্রাল রশ্মির আবির্ভাব ঘটে। উভয় প্রান্তের অ্যাস্ট্রোল রশ্মি পরস্পর জোড়া লেগে বেমতন্তু গঠন করে।

2) মেটাফেজ :
(i) এটি মাইটোসিসের দ্বিতীয় এবং স্বল্পস্থায়ী দশা। এই দশাটিতে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের দ্বারা ক্রোমোজোম সংখ্যা নির্ণয় সম্ভব কারন ক্রোমোজোমগুলি ছোটো, স্ফীত ও সবচেয়ে স্পষ্ট হয়।
(ii) বেম বা স্পিন্ডল গঠিত হয়। প্রতিটি ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ারে অবস্থিত কাইনেটোকোর নামক বিশেষ গঠন বেমতন্তুর সঙ্গে যুক্ত হয়। এই ধরনের বেমতন্তুকে ক্রোমোজোমাল বেমতন্তু বলে। যে বেমতন্তুগুলি এক মেরু থেকে অন্য মেরু পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে তাকে অবিচ্ছিন্ন তন্তু বলে।
(iii) এই সময় ক্রোমাটিড জুটি তাদের নিজস্ব সাধারন সেন্ট্রোমিয়ারের সাহায্যে কোশের বিষুব অঞ্চলে বা নিরক্ষীয় তলে অবস্থান করে।
(iv) প্রানীকোশের ক্ষেত্রে অ্যাস্ট্রাল রশ্মি এবং উদ্ভিত কোশের ক্ষেত্রে সাইটোপ্লাজমে অবস্থিত মাইক্রোটিউবিউল বেমতন্তু গঠন করে।


3) অ্যানাফেজ :
(i) এটি নিউক্লিয়াস বিভাজনের তৃতীয় এবং সবচেয়ে ক্ষনস্থায়ী দশা। এই দশায় সেন্ট্রোমিয়ারগুলি সমান দুই ভাগে বিভাজিত হয় ফলে প্রতিটি ক্রোমাটিড নতুন সেন্ট্রোমিয়ার সহ অপত্য ক্রোমোজোমে পরিণত হয়।
(ii) নতুন অপত্য ক্রোমোজমগুলির মধ্যে বিকর্ষন বল কাজ করায় ক্রোমোজোমগুলি দুটি সেট এ বিভক্ত হয়ে বিপরীত মেরুতে গমন করে। একে ক্রোমোজোমীয় চলন বা অ্যানাফেজীয় চলন বলে।
(iii) সেন্ট্রোমিয়ারের অবস্থান অনুসারে ক্রোমোজোমগুলিকে “V” (মেটাসেন্ট্রিক), “L ” (সাবমেটাসেন্ট্রিক), ” J “(অ্যাক্রোসেন্ট্রিক) এবং I (টেলোসেন্ট্রিক) আকৃতিবিশিষ্ট দেখায়।
(iii) অ্যানাফেজের শেষের দিকে ক্রোমোজোমগুলি বেমের মেরুপ্রান্তে এসে পৌছায়।

4) টেলোফেজ :
(i) এটি নিউক্লিয়াস বিভাজনের চতুর্থ এবং সর্বশেষ দশা।এই দশাতে দুই মেরুতে অবস্থিত অপত্য ক্রোমোজোমের ঘনীভবন দূর হয়, ক্রোমোজোম এর কুন্ডলী খুলে যেতে থাকে এবং ক্রোমোজোম গুলি দীর্ঘ,সরু এবং অস্বচ্ছ ক্রোমাটিড বস্তুর জট গঠন করে। এগুলি ধীরে ধরে নিউক্লয় জালকে রূপান্তরিত হয়।
(iii) এই দশায় বেমতন্তু ক্রমশ বিলুপ্ত হতে থাকে এবং উভয় প্রান্তের ক্রোমোজোমগুলিকে ঘিরে নিয়ক্লিয় পর্দার আবির্ভাব ঘটে।
(iii) প্রতিটি নিউক্লিয়াস আবনীর মধ্যে নিউক্লিওলাসের আবির্ভাব ঘটে।
(iv) প্রানীকোশের বিষুব অঞ্চলে ইন্টারজোনাল তন্তুগুলি থেকে স্টেমবডি গঠিত হয়।
(v) নিউক্লিয়াসে জলের পুনরায় শোষন, প্রসারণ এবং নিউক্লিক অ্যাসিড বিয়োজন এর কারণে দুটি পূর্ণাঙ্গ অপত্য নিউক্লিয়াস গঠিত হয়।

B) সাইটোকাইনেসিস দশা
মাইটোসিস এর সাইটোপ্লাজম এর বিভাজন কে সাইটোকাইনেসিস বলে।
উদ্ভিদকোশের ক্ষেত্রে :
(i) ক্যারিওকাইনেসিস এর পর টেলোফেজ চলাকালীনই বেমের বিষুব অঞ্চলে মাইক্রোটিউবিউল জমা হয়ে ফ্র্যাগমোপ্লাস্ট গঠন করে যা গলগি ভেসিকল এর সঙ্গে মিলিত হয়ে কোশপাত বা সেলপ্লেট গঠন করে।
(ii) কোশপাতের উভয়পাশে ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম পেকটেট ইত্যাদি জমা হয়ে কোশপ্রাচীর গঠিত হয়, ফলে সাইটোপ্লাজম বিভাজিত হয়ে দুটি অপত্য কোশ গঠন করে।
প্রানীকোশের ক্ষেত্রে :
(i) প্রানীকোশের ক্ষেত্রে ক্লিভেজ পদ্ধতিতে সাইটোপ্লাজম এর বিভাজন ঘটে।
মাইটোসিসের গুরুত্ব
(i) বৃদ্ধি
মাইটোসিস কোশ বিভাজনের ফলে বহুকোষী জীবদেহে ভ্রূন অবস্থায় পরিস্ফুরণ এবং স্বাভাবিক দৈহিক বৃদ্ধি সম্ভব হয়।
(ii) কোশ প্রতিস্থাপন ও ক্ষয়পূরন
জীবদেহের আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে মাইটোসিস কোশ বিভাজন দ্বারাই নতুন কোশ গঠন হয়।এছাড়া মানবদেহের বহিঃত্বক প্রতি চার সপ্তাহে মাইটোসিস কোশ বিভাজনের সাহায্য নতুন কোশ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়।
(iii)পুনরুৎপাদন
প্রানীদেহের কোনো অঙ্গ সমগ্র বিনষ্ট হলে মাইটোসিস কোশ বিভাজন দারা সেই অঙ্গের পুনরায় উৎপত্তি ঘটে।এই ঘটনাকে পুনরুৎপাদন বলে।
উদাহরণ :- চিংড়ি, কাঁকড়া ইত্যাদি প্রানীদের পদ,তারামাছের বাহু,টিকটিকির লেজ ইত্যাদি দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হলে আবার তার পুনরুৎপাদন ঘটে।
(iv) প্রজনন
কিছু এককোশী জীব মাইটোসিস কোশ বিভাজনের মাধ্যমে অযৌন জনন পদ্ধতিতে বংশবিস্তার করে থাকে।
উদাহরণ :- আলু,আদা,পাথরকুচি গাছ।