ওজন স্তর কি
পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের দ্বিতীয় স্তর অর্থাৎ স্ট্রাটোস্ফিয়ারের নিচের অংশ (ভূপৃষ্ঠ থেকে 20 থেকে 35 কিমের মধ্যে) ওজোন গ্যাসের একটি ঘনস্তর পৃথিবীকে বলয় রূপে ঘিরে রেখেছে, এই স্তরকে ওজন স্তর বা ওজোন স্পিয়ার বলা হয়। এই স্তরের পূরত্ব স্থানভেদে কম বেশি হয়। বায়ুমণ্ডলের ওজনের প্রায় 90 শতাংশ স্ট্রাটোস্ফিয়ারে পাওয়া যায়। ফরাসি পদার্থবিদ চার্লস ফ্যাব্রি ও হেনরি বুশন 1913 সালে এই স্তরটি আবিষ্কার করেন।
ওজোন গ্যাসের পরিচয়
ওজন গ্যাস অক্সিজেনের (O2) একটি বিশেষ রূপ যেখানে একটি অণুতে তিনটি পরমাণু অক্সিজেন থাকে। ওজন একটি নিলাভ বর্ণের তীব্র আঁশটে গন্ধযুক্ত গ্যাস। ওজোন গ্যাসের সংকেত O3

ওজোন স্তরের গুরুত্ব
(১) ওজোন স্তরটি সূর্য থেকে আগত 97% -99% অতিবেগুনি রশ্মির বিকিরণ শোষণ করে পৃথিবীকে UV রশ্মি থেকে রক্ষা করে। তাই ওজোন স্তরকে প্রাকৃতিক সৌরপর্দা বা ন্যাচারাল সানস্ক্রিন বলে।
(২) ওজোন স্তর থাকার কারণে গাছপালার স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় বৃদ্ধি সঠিক পরিমাণে হয়।
(৩) ওজোন গ্যাস সূর্যের তাপ ও অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে। ফলে এই স্তরে তাপমাত্রা খুব বেশি হয়। তা সত্ত্বেও ইহা বায়ুমণ্ডলের ভারসাম্য বজায় রাখে।
(৪) সকল প্রাণী ও উদ্ভিদকূলকে সূর্যের ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি থেকে রক্ষা করে।
(৫) বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় রাখে। সূর্যের ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি পৃথিবীর জীবজগতের সকল প্রাণের প্রতি তীব্র হুমকি স্বরূপ। ওজোন স্তর প্রতিনিয়ত ওই রশ্মিকে প্রতিহত করছে।
- ওজোন স্তরের এই অসীম গুরুত্বকে মাথায় রেখে জাতিসংঘ 16ই সেপ্টেম্বর দিনটিকে ‘বিশ্ব ওজন দিবস‘ হিসেবে ঘোষণা করেছে (1994 সালে)।
ওজোন স্তরের ক্ষয়
বিজ্ঞানীদের গবেষণা অনুযায়ী 1970 সালের পর থেকে স্ট্রাটোস্ফিয়ারের মোট ওজনের প্রায় 4% ধ্বংস হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে বায়ুমন্ডলের ক্লোরিন (Cl), ক্রমিন ওজনের সংস্পর্শে এসে ওজন অনু গুলিকে ধ্বংস করে ওজোন স্তরকে পাতলা করে দেয়।
ওজোন স্তরের ক্ষয় প্রতিরোধ ও সাফল্য লাভ
ওজোন স্তরের ক্ষয় একটি গুরুতর সমস্যা। এটি প্রতিরোধের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। বিশ্বব্যাপী মনটিয়াল প্রটোকল (1987) বা চুক্তি গৃহীত হয়েছে যার মাধ্যমে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলি ODS (Ozone Depleting Substances) কমানোর লক্ষ্য মাত্রা রেখেছে।
বর্তমানে পরিবেশবান্ধব গ্যাসের ব্যবহার ওজন পদার্থের ওজন ক্ষয়কারী পদার্থের পূর্ণব্যবহার ও উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে অনেকাংশই সাফল্য লাভ হয়েছে। মন্ট্রিল প্রটোকল বাস্তবায়নের মাধ্যমে 2050 সালের মধ্যে ওজন স্তরের ক্ষয় যে পরিমাণ হওয়ার সম্ভাবনা ছিল তার তুলনায় দশ গুণ কমানো সম্ভব হয়েছে।
অনুমান করা হয় এই প্রোটোকল 2030 সালের মধ্যে প্রতিবছর আনুমানিক দুই মিলিয়ন মানুষকে ত্বকের ক্যান্সার থেকে রক্ষা করবে।
সর্বশেষে বলা যায়, ওজোন স্তর হলো আমাদের জীবনের এক অনন্য রক্ষাকবচ। তাই শুধু দেশের দায়িত্ববান কর্ণধারক নন, এই স্থরকে রক্ষা করা প্রতিটি মানুষের সর্বসাধারণের দায়িত্ব ও কর্তব্য।