আবহাওয়া জলবায়ুর নিয়ন্ত্রক সমূহ

আবহাওয়া জলবায়ুর নিয়ন্ত্রক সমূহ সরাসরি আবহাওয়ার উপাদান সমূহকে প্রবাহিত করে যা পরোক্ষভাবে আবহাওয়া, জলবায়ু প্রবাহিত হয়। নিম্নে নিয়ন্ত্রণ গুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো ।

(১) অক্ষাংশ

সূর্য রশ্মি যেখানে লম্বভাবে পতিত হয় সেখানে উষ্ণ প্রকৃতির এবং যেখানে তীর্যভাবে পরে সেখানে শীতল প্রকৃতির। নিরক্ষীয় অঞ্চলে সূর্য রশ্মি লম্বভাবে পতিত হয় ফলে ওই স্থানে উষ্ণতা বেশি অনুভূত হয় আবার নিরক্ষরেখা থেকে মেরুর দিকে সূর্যরশ্মি তীর্যকভাবে পতিত হয়। ফলে সেই স্থানে উষ্ণতা কম অনুভূত হয়।

উদাহরণ

ক্রান্তীয় অঞ্চলে অবস্থিত কলকাতা (22°34′ উঃ) থেকে উচ্চ অক্ষাংশে অবস্থিত হ্যামার ফেস্ট (70°30’উঃ) বন্দরের উষ্ণতা অনেক কম।

(২) উচ্চতা

যে স্থানের উচ্চতা বেশি যেখানে শীতল প্রকৃতির আবহাওয়া এবং উচ্চতা কমলে উষ্ণ প্রকৃতির হয়ে থাকে।

উদাহরণ

কুইটো এবং গুয়াকুল শহর দুটি নিরক্ষীয় অঞ্চলে অবস্থিত হলেও গুয়াকুল সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র 12 মিটার উঁচুতে অবস্থিত এবং কুইটো সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে 2800 মিটার উঁচুতে অবস্থিত হওয়ার জন্য গুয়াকুলের গড় উষ্ণতা 35° সেলসিয়াস এবং কুইটের গড় উষ্ণতা 13° সেলসিয়াস।

(৩) সমুদ্র থেকে দূরত্ব

কোন স্থান যদি সমুদ্র থেকে কাছাকাছি অবস্থান করে তাহলে সেখানে সমভাবাপন্ন জলবায়ু এবং সমুদ্র থেকে দূরত্ব বাড়লে চরমভাবাপন্ন জলবায়ু লক্ষ্য করা যায়।

উদাহরণ

আরব সাগরের উপকূলে অবস্থিত মুম্বাই এর জলবায়ু সমভাবাপন্ন প্রকৃতির অপরদিকে উপকূল থেকে দূরে অবস্থিত দিল্লির জলবায়ু অপেক্ষাকৃত চরমভাবাপন্ন।

(৪) বায়ু প্রবাহ

কোনো স্থানের উপর দিয়ে উষ্ণ বায়ু প্রবাহিত হলে থাকলে সেখানে আবহাওয়া উষ্ণ প্রকৃতির হয় এবং কোন স্থানের উপর দিয়ে শীতল বায়ু প্রবাহিত হয়। তাহলে সেখানে শীতল আবহাওয়া লক্ষ্য করা যায়।

উদাহরণ

গ্রীষ্মকালে উত্তর-পশ্চিম ভারতে উষ্ণ লু এর প্রভাবে তাপমাত্রা 50° সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। আবার শীতকালে দক্ষিণ চীনে সাইবেরিয়ার শীতল বায়ুর প্রভাবে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে নেমে যায়।

(৫) সমুদ্র স্রোত

কোন স্থানের উপর দিয়ে উষ্ণ সমুদ্র স্রোত প্রবাহিত হলে তাহলে সেই স্থানে উষ্ণ আবহাওয়া লক্ষ্য করা যায় এবং সেই স্থানের উপর দিয়ে শীতল সমুদ্র স্রোত প্রবাহিত হয় সেই স্থান শীতল আবহাওয়ায় লক্ষ্য করা যায়।

উদাহরণ

উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোতের প্রভাবে ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের পশ্চিম উপকূলে শীতকালেও বরফ জমতে পারে না।

(৬) পর্বতের অবস্থান

কোন স্থানে জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু পর্বতের ধাক্কা খেয়ে প্রতিবাদ চাপে বৃষ্টিপাত ঘটায় যার ফলে ওই স্থানের আবহাওয়া শীতল প্রকৃতির হয় কিন্তু পার্শ্ববর্তী অনুবাদ ঢালে আবহাওয়া উষ্ণ প্রকৃতির হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে উষ্ণ বা শীতল বায়ুর গতিপথে কোন সুবিশাল পর্বত অবস্থান করলে পর্বতের উভয়দিকে তাপমাত্রার তারতম্য লক্ষ্য করা যায়।

উদাহরণ

ভারতের উত্তরে হিমালয় পর্বতমালা অবস্থানের ফলে সাইবেরিয়া থেকে আগত শীতল বায়ুর হাত থেকে ভারতবর্ষ চরম শৈত্যপ্রবাহের হাত থেকে রক্ষা পায়।

(৭) ভূমির ঢালের দিক

ভূমির ঢাল সৌরকিরণ প্রাপ্তির পরিমাণকে নিয়ন্ত্রণ করে। উত্তর গোলার্ধে দক্ষিণমুখী ভূমির ঢালে অধিক সূর্যলোক পায় ফলে অধিক উষ্ণ হয়। আবার উত্তর মুখে ঢাল কম উষ্ণ হয়। দক্ষিণ গোলার্ধে এর বিপরীত অবস্থা পরিলক্ষিত হয়।

(৮) ভূমি গঠনকারী শিলা

কোন স্থানের ভুমি আগ্নেয়  শিলাস্তর দ্বারা গঠিত হলে সেই স্থানের আবহাওয়া উন্নত প্রকৃতির হয় ।এবং কোন স্থানের ভূমি পাললিক শিলা দ্বারা গঠিত হয়, তাহলে সেই স্থানের আবহাওয়া শীতল প্রকৃতির হয়।

(৯) উদ্ভিদের ঘনত্ব ও প্রকৃতি

উদ্ভিদের ঘনত্ব বেশি হলে বাষ্পমোচন প্রক্রিয়ায় বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং বৃষ্টিপাত বেশি হয়। ফলে আবহাওয়া শীতল প্রকৃতির হয়। যে স্থানের উদ্ভিদের ঘনত্ব প্রায় নেই বললেই চলে, সেখানে বৃষ্টিপাত খুব কম থাকে, সেখানে আবহাওয়া উষ্ণ প্রকৃতির হয়।

উদাহরণ

ভারতের শুষ্ক পর্ণমোচী অরণ্যের গড় উষ্ণতা প্রায় 30° সেলসিয়াস আবার উদ্ভিদ শূন্য থর মরুভূমির গড় উষ্ণতা প্রায় 45° সেলসিয়াস।

১০) মেঘাচ্ছন্নতা

দিনের বেলায় আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে সূর্য থেকে আগত আলোক শক্তির পরিমাণ হ্রাস পায় ফলে বায়ুর উষ্ণতা কমে। আবার রাতের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হলে ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত তাপ মহাশূন্যে নির্গত হতে পারে না। ফলে বায়ুর উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়।

১১) মৃত্তিকার গঠন ও গ্রথন

মৃত্তিকা গঠনকারী উপাদানসমূহ হলো কাদা, পলি, বালি, নুরি, পাথর, কাঁকর প্রভৃতি।

পাথর কাঁকর ও বালি দিয়ে গঠিত হালকা গ্রথনের মাটি খুব দ্রুত উত্তপ্ত ও শীতল হয়। অপরপক্ষে কাদা ও পলি ভারী গ্রথনের মাটি তুলনামূলকভাবে ধীরে ধীরে উষ্ণ ও শীতল হয়।

উদাহরণ

থর মরুভূমি অঞ্চলে দিনের বেলায় উষ্ণতা গিয়ে দাঁড়ায় 45° সেলসিয়াসেরও বেশি আবার রাতের বেলায় দ্রুত ঠাণ্ডা হয়ে উষ্ণতা গিয়ে দাঁড়ায় 3°-10° সেলসিয়াস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *