দেশে ৪ ডিগ্রী উত্তর অক্ষাংশ থেকে ৩৪ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশের মধ্যে আর্দ্র ও শুষ্ক সেচসেবিত অঞ্চলগুলিতে ধান চাষ করা হয়।
ভারতের প্রধানত আউস, আমন, বোরো এই তিন প্রকারের ধান উৎপাদিত হয়।
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ এগ্রিকালচার রিসার্চ (Indian Council of Agricultural Research) এর মতে দেশের আটটি অঞ্চলে ধান উৎপাদিত হয়।
যেমন-
1) পশ্চিম হিমালয়ের আর্দ্র অঞ্চল
এখানকার পার্বত্য ও তরাই মৃত্তিকায় সামান্য পরিমাণ ধান চাষ হয়ে থাকে।
অঞ্চল সমূহ
হিমাচল প্রদেশ, জম্বু কাশ্মীর, উত্তরাঞ্চলের গাড়োয়াল অঞ্চলের অন্তর্গত।
2) গঙ্গা শতদ্রুর শুষ্কপ্রায় নদী গঠিত সমভূমি
এই সমভূমি অঞ্চলের উর্বর দো আঁশ মাটি পলিমাটি ছাড়াও বেলে মাটি ও লাল বেলে মাটি অঞ্চলেও যথেষ্ট পরিমাণ ধান উৎপাদিত হয়ে থাকে।
অঞ্চল সমূহ
পাঞ্জাবের– পাতিয়ালা, জলন্ধর, অমৃতসর।
উত্তরপ্রদেশের– বাণারসী, গোরক্ষপুর, ফৈজাবাদ।
বিহারের– দ্বারভাঙা, পূর্ণিয়া, মজঃফরপুর প্রভৃতি জেলা ধান উৎপাদনে বিশেষ খ্যাত।
ধান উৎপাদনে ভারতের মধ্যে উত্তর প্রদেশ দ্বিতীয় পাঞ্জাব তৃতীয় এবং বিহার ষষ্ট স্থান অধিকার করেছে।
3) পশ্চিম ভারতে শুষ্ক মরুপ্রায় অঞ্চল
এই অঞ্চলের পলিমাটি ও লাল হলুদ মাটিতে অল্পমাত্রায় ধান উৎপাদিত হয়ে থাকে।
অঞ্চলসমূহ
হরিয়ানা ও রাজস্থান এই অঞ্চলের অন্তর্গত।
4) পশ্চিমবঙ্গ অসমের আর্দ্র নদী গঠিত সমভূমি
এখানকার উর্বর নদীবাহিত পলিমাটি লাল মাটি উর্বর তরাই মৃত্তিকা ও ল্যাটেরাইট মাটি ধান চাষের পক্ষে আদর্শ।
অঞ্চল সমূহ
পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম এখানকার প্রধান ধান উৎপাদক অঞ্চল।
পশ্চিমবঙ্গের– বর্ধমান, বীরভূম, মেদিনীপুর।
অসমের– গোয়ালপাড়া, জড়ং, কামরূপ, লাখিমপুর প্রভৃতি অঞ্চল ধান উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য।
5) পূর্ব হিমালয়ের আর্দ্র অঞ্চল
এখানকার লাল দো-আঁশ মাটি ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা ও পলিমাটি গঠিত অঞ্চলে কিছু পরিমাণ ধান উৎপাদিত হয়ে থাকে।
অঞ্চল সমূহ
উত্তর পূর্ব ভারতের মেঘালয় অরুনাচল প্রদেশ নাগালেন্ড মনিপুর ত্রিপুরা প্রভৃতি অঞ্চল গুলির প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার মধ্যে শ্রম ও উন্নত প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে সামান্য কিছু পরিমাণ ধান উৎপন্ন হয়ে থাকে।
6) মধ্য ভারতের উচ্চভূমি
কৃষ্ণ মৃত্তিকা লাল মাটি ও নদীবাহিত পলিমাটি যুক্ত স্থানে কিছু কিছু ধান উৎপাদিত হয়।
অঞ্চল সমূহ
এই অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত প্রধান দুটি রাজ্য হল মহারাষ্ট্র ও মধ্যপ্রদেশ।
মহারাষ্ট্রের– থানে, রত্নগিরি, কোলাপুর প্রভৃতি জেলা।
মধ্যপ্রদেশের– বিলাসপুরের উর্বর মৃত্তিকা যুক্ত অঞ্চলগুলিতে কিছু পরিমাণ ধান উৎপাদিত হয়।
7) দাক্ষিণাত্যের মালভূমি
দাক্ষিণাত্য মালভূমির কৃষ্ণ মৃত্তিকা, লাল মাটি, ল্যাটেরাইট মাটিযুক্ত অঞ্চলে কিছু পরিমাণ ধান চাষ করা হয়।
এছাড়া এখানকার নদীবাহিত উপকূলবর্তী পলি মাটিতে বেশ কিছু পরিমাণ ধান উৎপাদিত হয়।
অঞ্চল সমূহ
দাক্ষিণাত্য মালভূমির অন্তর্ভুক্ত তিনটি রাজ্যেই প্রধানত ধান চাষ করা হয় এগুলি হল কেরালা, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক।
8) পূর্ব উপকূলবর্তী সমভূমি
এই উপকূলবর্তী অঞ্চলে নদী গঠিত ও উপকূলবর্তী পলিমাটি এবং উর্বর দো আঁশ মাটিতে প্রচুর পরিমাণে ধানের চাষ হয়।
অঞ্চল সমূহ
এখানকার তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ ও উড়িষ্যা রাজ্যে ব্যাপক পরিমাণে ধান চাষ হয়।
তামিলনাড়ুর– চেঙ্গলপট্টু, উত্তর ও দক্ষিণ তিরুনেলভেলিতে প্রচুর পরিমাণ ধান চাষ হয়ে থাকে।
অন্ধ্রপ্রদেশের– পূর্ব ও পশ্চিম গোদাবরী, কৃষ্ণা ও গুন্টুর ইত্যাদি জেলা ধান উৎপাদনে খ্যাত।
উড়িষ্যা রাজ্যের– কটক, পুরী, বালেশ্বর, গুঞ্জাম প্রভৃতি জেলায় ধান উৎপাদিত হয়ে থাকে।
- ধান উৎপাদনে ভারত বিশ্বে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করলেও এখনকার হেক্টর প্রতি ধানের উৎপাদন অত্যন্ত কম।
- ভারতের ধান উৎপাদক প্রধান প্রধান রাজ্যগুলি হল পশ্চিমবঙ্গ, অসম, উত্তর প্রদেশ, উড়িষ্যা, পাঞ্জাব, বিহার প্রকৃতি রাজ্য।
- এদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ ও পাঞ্জাব ধান উৎপাদনে যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে। এছাড়াও তামিলনাড়ু চতুর্থ, অন্ধ্রপ্রদেশ পঞ্চম স্থান অধিকার করে।