ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগ থেকে প্রায় 1600 কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত অদৃশ্য গ্যাসীয় আবরণকে বায়ুমন্ডল বলে।
বায়ুমণ্ডলের ছয়টি স্তর যথা- ট্রপোস্ফিয়ার, স্ট্রাটোস্ফিয়ার, মেসোস্ফিয়ার, থার্মোস্ফিয়ার, এক্সোস্ফিয়ার, ম্যাগনেটোস্ফিয়ার।
বায়ুমণ্ডলের স্তর, উচ্চতা, উষ্ণতা, চাপ, এবং গ্যাসীয় উপাদান সমূহের তালিকা
স্তরের নাম | উচ্চতা | উষ্ণতা | চাপ | উপাদান |
ট্রপোস্ফিয়ার | 0- 18 কিমি | +15 থেকে -56°C | সর্বোচ্চঃ1013mb সর্বনিম্নঃ100mb | N2, O2, CO2, H2O, |
স্ট্রাটোস্ফিয়ার | 18- 50 কিমি | -56 °C থেকে 0°C | সর্বোচ্চঃ100mb সর্বনিম্নঃ1mb | N2, O2, O3 |
মেসোস্ফিয়ার | 50- 80 কিমি | 0°C থেকে -90°C | সর্বোচ্চঃ1mb সর্বনিম্নঃ0.1mb | N2, O2, O2+, NO+ |
থার্মোস্ফিয়ার | 80- 600 কিমি | -90°C থেকে 1200°C | সর্বোচ্চঃ0.1mb সর্বনিম্নঃ~0mb | O2+, O+, NO+ |
এক্সোস্ফিয়ার | 600- 1500 কিমি | 1200°C থেকে 1600°C | চাপ শূন্য | H2, He |
ম্যাগনেটোস্ফিয়ার | 1500- 10,000 কিমি | – | চাপ শূন্য | বায়বীয় উপাদান প্রায় নেই |
ট্রপোস্ফিয়ার (Troposphere)
গ্রিক শব্দ Tropos কথাটির অর্থ মিশে যাওয়া এবং Sphere শব্দটির অর্থ মন্ডল। তাই একে ট্রপোস্ফিয়ার নামকরণ করা হয়েছে। এই বায়ুস্তর সবচেয়ে ভারী ও ঘন বলে একে ঘনমন্ডলও বলাহয়।বায়ুমণ্ডলের শতকরা 75 ভাগ বায়ু এই স্তরে থাকে।
বিস্তৃতি
ভূপৃষ্ঠের উপর 10 থেকে 12 কিলোমিটার পর্যন্তবিস্তৃত এই স্তর। নিরক্ষীয় অঞ্চলে এটি 18 কিলোমিটার এবং দুই মেরু অঞ্চলে 8 কিমি অবধি বিস্তৃত থাকে।
বৈশিষ্ট্য
১) এই স্তরে উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে উষ্ণতা ক্রমে হ্রাস পেতে থাকে। প্রতিকিলোমিটার উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে উষ্ণতা 6.4°C হারে হ্রাস পায়।
২) এই বায়ুস্তরের ঘনত্ব ও চাপ সবথেকে বেশি।
৩) এই বায়ুস্তরে ধূলিকণা জলীয় বাষ্প কুয়াশা ও মেঘ জমে।
৪) মোট বায়ু শতকরা 75 ভাগ এই স্তরে অবস্থিত।
৫) ট্রপোস্ফিয়ারে বায়ুমণ্ডলের 90 শতাংশ জলীয় বাষ্প, ধূলিকণা, মেঘ থাকে বলে এই স্তরে ঝড়-বৃষ্টি, তুষারপাত, বজ্রপাত প্রভৃতি প্রাকৃতিক ঘটনাগুলি ঘটে থাকে। তাই স্তরকে ক্ষুব্ধমন্ডলও বলা হয়।
ট্রপোপজ (Tropopause)
ট্রপোস্ফিয়ারের উর্ধ্বসীমায় প্রায় 3 কিমি অংশে বায়ুর উষ্ণতা হ্রাস বা বৃদ্ধি কোনটাই ঘটে না, এই অংশকে বলা হয় ট্রপোপজ।
স্ট্রাটোস্ফিয়ার (Stratosphere)
ট্রপোস্ফিয়ারের উপর থেকে 50 কিমি বিস্তৃত বায়ুমণ্ডলকে স্ট্রাটোস্ফিয়ার বলে।
এই স্তরে ঝড়-বৃষ্টি, বজ্রপাত প্রভৃতি প্রাকৃতিক ঘটনাগুলো হয় না বলে একে শান্তমন্ডল বলা হয়ে থাকে।
বিস্তৃতি
ট্রপোপজের উপর থেকে 50 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত।
বৈশিষ্ট্য
১) এই স্তরে বায়ু হালকা ও বায়ুতে অক্সিজেনের পরিমাণ কম থাকে। এখানে জলীয় বাষ্প বা মেঘ থাকে না।
২) ঝড়, বৃষ্টি, বজ্রপাত প্রভৃতি প্রাকৃতিক ঘটনাগুলি এই স্তরে ঘটনা ঘটে না।
৩) এই স্তরে উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে উষ্ণতা বৃদ্ধি পেতে থাকে।
৪) স্ট্রাটোস্ফিয়ারের উর্ধাংশে 20 থেকে 35 কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত অংশে ওজোন গ্যাসের প্রায় 90% অংশ উপস্থিত থাকে। তাই এই অংশটিকে ওজনমন্ডল বলে থাকে।
সূর্য থেকে নিঃসারিত তাপ ও অতিবেগুনি এই ওজোন স্তর শোষণ করে। এর ফলে আমাদের জীবজগত ভয়ংকর বিপদ থেকে রক্ষা পায়।
তাপ, অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে বলে এই স্তরের উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়।
৫) ওজোন স্তরের এই অংশটি শব্দ তরঙ্গ প্রতিফলিত করতে পারে।
স্ট্রাটোপজ (Stratopause)
স্ট্রাটোস্ফিয়ারের উর্ধসীমায় যে অংশে উষ্ণতা বৃদ্ধি বা হ্রাস অর্থাৎ অপরিবর্তিত থাকে তাকে স্ট্রাটোপজ বলে।
মেসোস্ফিয়ার (Mesosphere)
স্ট্রাটোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বে অবস্থিত বায়ুমণ্ডলের স্তরটিকে মেসোস্ফিয়ার বলে।
বিস্তৃতি
স্ট্রাটোপজ থেকে প্রায় 80 কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত।
বৈশিষ্ট্য
১) বায়ুমণ্ডলের এই স্তরে উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে উষ্ণতা ক্রমে হ্রাস পেতে থাকে। 80 কিমি উচ্চতায় উষ্ণতা হ্রাস পেয়ে প্রায় -90°C হয়ে যায়। এটি বায়ুমণ্ডলের সব থেকে শীতলতম স্তর।
২) এই স্তরে বায়ুর চাপ অনেক কম থাকে।
৩) মহাকাশ থেকে আসা উল্কাপিণ্ড এই স্তরে এসে পুড়ে ধ্বংস হয়ে যায়।
মেসোপজ (Mesopause)
মেসোস্ফিয়ারের উর্ধ্বসীমায় যে অংশে উষ্ণতা প্রায়ও পরিবর্তিত থাকে, সেই অংশকে মেসোপজ বলে।
থার্মোস্ফিয়ার (Thermosphere)
মেসোস্ফিয়ারের উর্ধাংশে অবস্থিত বায়ুমণ্ডলের অতি উত্তপ্ত স্তরকে থার্মোস্ফিয়ার বলে।
বিস্তৃতি
মেসোপজ থেকে প্রায় 500 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত এই স্তর।
বৈশিষ্ট্য
১) এই স্তরে হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, ওজোন গ্যাসগুলি আয়নিত অবস্থায় থাকে।
২) এই স্তরে উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে ক্রমান্বয়ে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকে।
৩) এই স্তরের নিচের অংশে আণবিক নাইট্রোজেন ও উপরের অংশে পারমাণবিক অক্সিজেন মহাবিশ্ব থেকে নিঃসারিত অতিবেগুনি রশ্মি, গামারশ্মি, এক্সরশ্মি শোষণ করে। এর ফলে উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়, স্তরটি উর্ধ্বে সময় উষ্ণতা পৌঁছায় প্রায় 1200°C।
৪) আয়োনিত বায়বীয় কণাগুলো ইলেকট্রন, প্রোটন ইত্যাদি অনিতকনার সংস্পর্শে এসে এক ধরনের উজ্জ্বল আলোবিকিরণ করে। একে মেরুজ্যোতি বা অরোরা বলে।
৫) এই স্তরে পৃথিবী থেকে পাঠানো বেতারতরঙ্গ প্রতিফলিত হয়।
এক্সোস্ফিয়ার (Exosphere)
থার্মোস্ফিয়ারের উপরে প্রায় মহাশূন্য পর্যন্ত বিস্তৃত বর্হিমণ্ডলকে এক্সোস্ফিয়ার বলে।
বিস্তৃতি
থার্মোস্ফিয়ারের উর্ধাংশে থেকে 1500 কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত এইস্তর।
বৈশিষ্ট্য
১) উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে এইস্তরে উষ্ণতাও বৃদ্ধি পায় তবে থার্মোস্ফিয়ারের মতো দ্রুত নয়।
২) এই স্তরে বায়ুর সমস্ত উপাদানই আয়নিত অবস্থায় থাকে।
৩) এই স্তরের সর্বশেষ অংশে উষ্ণতা প্রায় 1600°C পর্যন্ত হতে পারে।
৪) কৃত্রিম উপগ্রহ, মহাকাশকেন্দ্র এই স্তরে পাঠানো হয়।
৫) বায়ুমণ্ডলের সর্বশেষ অংশে থাকে বলে এর আরেক নাম বর্হিমণ্ডল।
ম্যাগনেটোস্ফিয়ার (Magnetosphere)
এক্সোস্ফিয়ারের উপরি স্তরে পৃথিবীকে বেষ্টন করে প্রায় বায়ু শূন্য যে চৌম্বক ক্ষেত্র আছে, তাকে ম্যাগনেটোস্ফিয়ার বলে।
বিস্তৃতি
এক্সোস্ফিয়ারের প্রায় 1000 কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত।
বৈশিষ্ট্য
১) এই স্তরটি প্রায় বায়ুশূন্য।
২) এই স্তরে ইলেকট্রন, প্রোটন প্রভৃতি মৌলকণা দিয়ে গঠিত একটি স্থায়ী তড়িৎচুম্বক ক্ষেত্র বিস্তৃত।