প্রাচীন কাল থেকেই বিভিন্ন জীবেরা অর্থাৎ জীব বৈচিত্র্য আমাদের খাদ্যের চাহিদা, স্বাস্থ্য এবং অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করে আসছে। মানব সংস্কৃতির সঙ্গে জীব বৈচিত্র্যের ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক সংযোগ স্থাপিত হয়েছে। তাই পরিবেশে বসবাসকারী বিভিন্ন জীবের অবলুপ্তি সামাজিকভাবেও মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফলে আবশ্যিক হয়ে পড়ে জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণের।
জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা গুলি নিম্নে আলোচনা করা হল-
শক্তি সরবরাহকারী হিসাবে
উদ্ভিদেরা সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় সূর্যালোকের উপস্থিতিতে খাদ্য প্রস্তুত করে যা জীবেদের খাদ্যের প্রাথমিক উৎস। উদ্ভিদ থেকেই বিভিন্ন প্রাণিতে এই খাদ্যস্ত শক্তি স্থানান্তরিত হয়। তাই বাস্তুতন্ত্রের শক্তি প্রবাহ অক্ষুন্ন রাখতে জীব বৈচিত্রের সংরক্ষণ অত্যন্ত প্রয়োজন।
খাদ্য সরবরাহকারী হিসাবে
উদ্ভিদ থেকে আমরা দানাশস্য, শাকসবজি, ফল ইত্যাদি খাদ্য হিসেবে পেয়ে থাকি যা আমাদের খাদ্যের চাহিদার অনেকটাই পূরণ করে। এছাড়াও প্রাণীদের থেকে মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ইত্যাদি পাওয়া যায়। মাংসের জন্য মুরগি, ছাগল, শুয়োর, ভেড়া প্রতিপালন করা হয়। হাঁস ও মুরগি ডিমের জন্য এবং গরু, ছাগল, মোষ দুধের জন্য পালন করা হয়।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে
বর্তমানে চিকিৎসায় বিশেষ করে ওষুধ তৈরিতে বহুল সংখ্যক উদ্ভিদ প্রজাতি ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রায় ৭০ হাজার উপর উদ্ভিদ প্রজাতি থেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ওষুধ প্রস্তুত করা যায়। স্তন্যপায়ী প্রাণীদের অনেক হরমোন মানুষের বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও ইঁদুর, গিনিপিগ, বানর ইত্যাদি প্রাণী গবেষণাগারে গবেষণার কাজে ব্যবহার করা হয়।
জিন বৈচিত্রের ভান্ডারী হিসেবে
জিন বৈচিত্র্য জীবেদের অভিযোজনে এবং রোগ বিস্তার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তাই জিন ভান্ডারের সাহায্যে শুক্রাণু, ডিম্বাণু ও উদ্ভিদ কেলাস সংরক্ষণ করা হচ্ছে।
শিল্পক্ষেত্রে
জীব বৈচিত্র্য দেশের পর্যটন শিল্পের প্রসার ঘটায়। বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে জীব বৈচিত্রের ব্যবহার করে বিভিন্ন শিল্প গড়ে ওঠে। জীব বৈচিত্র্য কোন দেশের অর্থনৈতিক বুনিয়াদকে সুদৃঢ় করে।
বাস্তু তন্ত্র ও পরিবেশ রক্ষায়
বাস্তু তন্ত্রের ভারসাম্য এবং পরিবেশ রক্ষায় জীব বৈচিত্র্যের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। পরিবেশে প্রতিটি জীব অপর জীবের সঙ্গে নির্ভরশীল (উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে প্রবাল দ্বীপের সাহায্যে বহু মাছের অস্তিত্ব রক্ষা)। কোনো জীব প্রজাতির আধিক্য অথবা হ্রাস হলে পরিবেশের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়। বৃষ্টিপাত ঘটাতে, পরিবেশ শীতল রাখতে, দূষণ প্রতিরোধ করতে জীবেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
অন্যান্য
উদ্ভিদ থেকে গৃহ নির্মাণের সামগ্রী পাওয়া যায়। চামড়া উল রেশম মুক্তা ইত্যাদি বিভিন্ন প্রাণী থেকে আমরা পেয়ে থাকি। গরু মোষের মল সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বড় বড় উদ্ভিদেরা পাখি ও অন্যান্য জীবজন্তুর আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও অনেক উদ্ভিদ ও প্রাণী বিভিন্ন ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।