অজানা কিছু প্রাণীর অজানা মজাদার তথ্য

অবাক বিস্ময়কর আমাদের পৃথিবী। বিশ্বের আনাজে কানাজে ছড়িয়ে আছে এমন সব প্রাণী বা প্রজাতি যাদের জীবন-যাপন, স্বভাব, জীবন চক্র যেমন ভিন্ন তেমনি বিস্ময়কর। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আমাদের খুব পরিচিত তেমনি কিছু কিছু প্রাণী একেবারে আজানা। এই সকল প্রাজাতির মধ্যে কোন কোন প্রাজাতি এই মানুষ সৃষ্ট পরিবর্তনশীল পরিবেশে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষাতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। কোন কোন প্রাজাতি হারিয়ে যাচ্ছে অগোচরে। আবার কেউ কেউ বহাল তবিয়তে নিজদের বংশবিস্তার করে যাচ্ছে। জানলে আবাক হবেন ২০১২ সালে International Union for Conservation of Nature একটি সমীক্ষার পর প্রায় ৩০৮০ টি প্রাণীকে বিপন্ন প্রাণী হিসাবে চিহ্নিত করেছে। আবার মশার মতো ক্ষুদ্র এবং রোগবহনকারী প্রাণীদের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে বিশ্বউষ্ণায়ন কিছু কিছু মশার প্রজাতির বংশবিস্তারে ব্যাপক সহায়তা করছে। এইরকম কিছু জানা- অজানা প্রাণীর অজানা মজাদার তথ্য তুলে ধরা হলে নিম্নে-

পৃথিবীর সব থেকে বড় কচ্ছপ

পৃথিবীর সব থেকে বড় কচ্ছপ হল লেদার ব্যাক টার্টল। বিজ্ঞানসম্মত নাম- ‘ডার্মোচেলিস কোরিয়েসি।’

এদের ওজন ৬০০ থেকে ৮০০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে এবং দৈর্ঘ্য ২ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।

সাধারণত উষ্ণ সামুদ্রিক জলে এরা বাস করে এবং এদের প্রধান খাদ্য হলো বিভিন্ন জলজ প্রাণী, উদ্ভিদ, শ্যাওলা, শামুক। 

এই কচ্ছপের লেদার ব্যাক বলা হয় কারণ এদের পিঠের খোলস শক্ত ও পুরু চামড়ার মতো। এদের পিছনে পা দুটো হাঁসের পায়ের মতো বলে এরা খুব দ্রুত সাঁতার কাটতে পারে।

পৃথিবীর সব থেকে বড় কচ্ছপ লেদারব্যাক টার্টল leatherback turtles
লেদারব্যাক টার্টল এবং মানুষের মধ্যে তুলনা

অক্টোপাস কি সত্যিই হিংস্র

না মোটেই নয়। প্রাচীন অনেক ভ্রান্ত ধারণার মতোই এই ধারনা সর্বই মিথ্যে। অক্টোপাস আদৌ হিংস্র প্রাণী নয়।

মানুষকে খাওয়াতো দূরের কথা, কখনো কখনো এরাই মানুষের খাদ্য হয়ে যায়!

মানুষের মত অন্যান্য প্রাণীদের কি রক্তের গ্রুপ আছে

মানুষের দেহে প্রধানত ৪ ধরনের ব্লাড গ্রুপ দেখা যায়। 

মানুষ ছাড়া ইঁদুরের প্রায় ৪ রকম ব্লাড গ্রুপ আছে।

বিড়ালের দেহে ২ রকম, খরগোশের দেহে ৫ রকম, এবং কুকুর ও ভেড়ার ৭ প্রকারের ব্লাড গ্রুপ লক্ষ্য করা যায়।

এছাড়াও ঘোড়ার ৯, গরুর ১২ এবং মুরগির প্রায় ১১ রকমের ব্লাড গ্রুপ চিহ্নিত করা গেছে।

তবে সবাইকে টেক্কা দিয়ে শুকরের দেহে প্রায় ১৬ রকমের ব্লাড গ্রুপের হদিস পাওয়া গেছে।

বিভিন্ন প্রাণীর রক্তের গ্রুপ
বিভিন্ন প্রাণীর রক্তের গ্রুপের চার্ট

পৃথিবীর সবথেকে বড় বাদুড়

গোল্ডেন ক্রাউনেড ফ্লায়িং ফক্স যার বৈজ্ঞানিক নাম Acerodon Jubatus হল পৃথিবীর সবথেকে বড় বাদুরের প্রজাতি যেটি শুধুমাত্র ফিলিপাইনে দেখতে পাওয়া যায়।

একটি পূর্ণ বয়স্ক এই বাদুড়ের ডানা ৫ থেকে ৬ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে এবং ওজন প্রায় দেড় কেজি মতো হতে পারে।

এদেরকে ফ্লাইং ফক্স বলা হয় কারণ এদের মুখটি দেখতে অবিকল শেয়ালের মত। 

এত বড় হওয়া সত্ত্বেও এরা কিন্তু মাংসাশী নয় এবং লাজুক স্বভাবের। গাছের ফল খেয়েই এরা জীবন ধারণ করে। 

পৃথিবীর সবথেকে বড় বাদুড় গোল্ডেন ক্রাউনেড ফ্লায়িং ফক্স
গোল্ডেন ক্রাউনড ফ্লাইং ফক্সের আকার

পৃথিবীর সবথেকে ছোট আকারের বাদুড়

পৃথিবীর সব থেকে ছোট আকারের বাদুড় হল বাম্বল্ বি ব্যাট। কিটিস হগ নোসড ব্যাট নামেও পরিচিত এই বাদুড় প্রজাতটির শরীরের দৈর্ঘ্য মাত্র এক ইঞ্চির সামান্য বেশি, ওজন দুই গ্রামের চেয়েও কম। 

সাধারনত থাইল্যান্ড ও মায়ানমারে এদের দেখতে পাওয়া যায়।  

এত ক্ষুদ্র আকারের হওয়া সত্বেও এরা কিন্তু বাস্তুতন্ত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

এদের প্রধান খাদ্য ছোট ছোট পোকামাকড়, তাতে পোকামাকড়ের সংখ্যা নিয়ন্ত্রিত হয় এবং এরা প্রজাপতি কাজটিও করে থাকে। অর্থাৎ পরাগ বহন করে ফুলের পরাগ সংযোগ ঘটায়।

পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট বাদুড়
বাম্বল বি ব্যাট -পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট বাদুড়

অক্টোপাস বাচ্চা দেয় না ডিম পাড়ে

উত্তরটি- ডিম পাড়ে। 

একটি স্ত্রী অক্টোপাস একসঙ্গে প্রায় ১০০০০ ডিম পেড়ে থাকে এবং ডিম ফুটে বাচ্চা বেরোনো পর্যন্ত অপেক্ষা করে। 

এইজন্য ডিম পাড়ার আগেই স্ত্রী অক্টোপাসকে পেটপুরে খেয়ে নিতে হয়।

কারণ একবার ডিম পাড়া হয়ে গেলে বাচ্চা না ফুটা পর্যন্ত স্ত্রী অক্টোপাসটি কিছুই খায় না।

সারাজীবন উপবাসী প্রাণী

এই প্রাণীকুলের প্রায় সমস্ত প্রাণীদেরই জীবনধারণের জন্য খাদ্য প্রয়োজন পড়ে।

কিন্তু এই পৃথিবীতে এমন এক প্রাণী আছে যে তার জীবনকালে কিচ্ছুটি মুখে তুলে না।

মে ফ্লাই (MayFlies) নামে এক ধরনের মাছি আছে যারা তাদের অল্প জীবনকালে কিছুই খায় না।

সাধারণত সারা উত্তর আমেরিকায় এই মাছি বেশি পরিমাণে দেখতে পাওয়া যায়। 

এই মাছির জীবনকাল কয়েক ঘন্টা থেকে একদিন হতে পারে। এই জীবনকালে তাদের একটাই লক্ষ্য একজন সঙ্গী খুঁজে নেওয়া।

যদিও এই মাছি খুব অল্প সময় বেঁচে থাকে এবং কিছুই খায় না কিন্তু এদের লার্ভা জলজ নিম্ফ আকারে জলে এক বছর পর্যন্ত থাকে।

একসময় তারা প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে জল থেকে উঠে আসে। কয়েক ঘন্টা বেচেঁ থাকে, জলে ডিম পাড়ে তারপর টুক করে মরে যায়। 

সব থেকে মজার ব্যাপার হল আমেরিকাতে এই মে ফ্লাই -এর প্রায় ৬০০ টিরও প্রজাতি দেখতে পাওয়া যায় আর গোটা পৃথিবীতে প্রায় ৩০০০!

জোনাকি কিভাবে আলো তৈরী করে

জোনাকি পোকার পেটের নিচের দিকের অংশে লুসিফেরিন নামে একটি রাসায়নিক পদার্থ থাকে।

যা অক্সিজেনের সংস্পর্শে এলে আলো তৈরি করে।

এই কাজে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করে লুসিফারেজ নামে এক ধরনের উৎসেচক।

এইভাবে আলো জ্বালানোর পদ্ধতিকে বলে বায়ো লুমিনিসেন্স।

বলা বাহুল্য এই আলোতে কিন্তু কোন উত্তাপ তৈরি হয় না। আর জোনাকির আলো দপ্ দপ্ করে জোলার কারণ- জোনাকিটি কখন অক্সিজেন সরবরাহ করছে তার উপর নির্ভর করে। 

উটের আবাক জলপান

একটি তৃষ্ণার্ত উট ঠিক কতটা পরিমাণ জল খেতে পারে বলে আপনার ধারণা? 

আশ্চর্য ব্যাপার মরুভূমির যাত্রা সমাপ্ত করার পর একটি পরিশ্রান্ত উট একবারই প্রায় ১১০ থেকে ১১৫ লিটার পর্যন্ত জল পান করতে পারে।

এই জল তার দেহকোষ ও তন্তুতে সঞ্চালিত হয়ে থাকে। এরপর দীর্ঘদিন জল না পেলেও এদের চলে যায়।

একটি তৃষ্ণার্ত উট একবারই প্রায় ১১০ থেকে ১১৫ লিটার জল পান করতে পারে
উট একবার প্রায় ১২০ লিটার জল পান করতে পারে

ডোডো পাখি

মরিশাস দ্বীপে আজ থেকে প্রায় আড়াইশো বছর আগে এক বিশেষ প্রজাতির হাঁস বাস করত। 

বর্তমানে এটি একটি লুপ্ত প্রাণী এবং এর জন্য দায়ী মানুষ।

প্রধানত পর্তুগিজ আদিবাসীরাই ডোডো পাখির বিলুপ্ত হওয়ার কারণ।

মরিশাস দ্বীপের ডোডো পাখি এখন লুপ্ত প্রাজাতি
ডোডো পাখি

সবথেকে বড় অক্টোপাস

জায়েন্ড প্যাসিফিক অক্টোপাস যার বৈজ্ঞানিক নাম – এন্টেরোক্টোপাস ডোফ্লিনি হল অক্টোপাস প্রজাতির সবথেকে বৃহতাকার প্রজাতি।

সাধারণত উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরে এদের দেখা যায়। 

সবচেয়ে বড় জায়েন্ড প্যাসিফিক অক্টোপাসটি ৫০ কেজির মত ওজন হতে পারে এবং তাদের বাহুর দৈর্ঘ্য ২০ ফুট মত হতে পারে। গড়ে এই প্রজাতির অক্টোপাসাদের ওজন হয় ১৬ থেকে ১৭ কেজি পর্যন্ত এবং বাহুর দৈর্ঘ্য ১৪ থেকে ১৫ ফুট হতে পারে।

অন্যান্য অক্টোপাসের তুলনায় এই অক্টোপাসেরা দীর্ঘদিন, প্রায় ৪ বছর বেঁচে থাকতে পারে। এবং প্রজননের পর পুরুষ এবং স্ত্রী দুজনেই মারা যায়।

স্ত্রী অক্টোপাসীরা একটু বেশি দিন বাঁচে কারণ ডিম দেওয়ার পর সেই ডিম না ফোটা পর্যন্ত তারা পাহারা দেয়। 

পৃথিবীর সবথেকে বড় অক্টোপাস প্রাজাতি হল জায়েন্ড প্যাসিফিক অক্টোপাস
জায়েন্ড প্যাসিফিক অক্টোপাস এবং মানুষের মধ্যে তুলনা

সবথেকে ছোট অক্টোপাস

পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে বাস করা ওলফি অক্টোপাস হল বিশ্বের সবথেকে ছোট অক্টোপাস।

মাত্র দুই সেমিরও কম দৈর্ঘ্যের এই অক্টোপাসটি ওজন এক গ্রামেরও কম।

অন্যান্য অক্টোপাসের তুলনায় এই প্রজাতির অক্টোপাসীরা তাদের দেহের মতোই খুবই কম সময় বেঁচে থাকে, প্রায় ৬ মাস। 

পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক প্রাণী

জানলে আশ্চর্য হবেন পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক প্রাণী আমাদের আশেপাশে ঘোরাফেরা করে।

মশা হল বিশ্বের সবচেয়ে মারাত্মক, ঘাতক, বিপজ্জনক প্রাণী। 

এরা পৃথিবীর প্রায় প্রত্যেকটি কোণে পাওয়া যায়।

ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, জিকা ভাইরাস, এডস প্রভৃতি মারণরোগের বাহক এই প্রাণী সারা পৃথিবীতে গড়ে প্রতি বছর সাত লাখ থেকে দশ লাখ মৃত্যুর জন্য দায়ী।

পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক প্রাণী হল মশা
মশা পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক প্রাণী

পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত প্রাণী

পৃথিবীর সবথেকে হিংস্র ও বিষাক্ত প্রাণীদের তালিকায় সবার উপরে থাকবে বক্স জেলিফিশ।

সাধারণত ইন্দো প্রশান্ত মহাসাগরের বাসিন্দা এই বক্স জেলিফিশের বিষ খুবই ভয়ংকর।

জেলিফিসগুলি দেখতে খুব সুন্দর হয়ে থাকে এবং তাদের দেহ স্বচ্ছ কাচের মত হয়।

তারা ১৫ টি ট্যান্টিক্যালস দ্বারা প্রায় ১০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি তাঁবুর মতো আস্বাদন তৈরি করে। 

এই ট্যান্টিক্যালসগুলি নেমাটোসিস্ট নামের একটি অত্যন্ত বিষাক্ত পদার্থ ধারণ করে থাকে। 

এই ট্যান্টিক্যালসগুলির সংস্পর্শে এলে একই সাথে হৃদপিন্ডের সাথে স্নায়ুতন্ত্র ক্রিয়া বন্ধ হয়ে।

পরিনাম তৎক্ষণাৎ মৃত্যু!

পৃথিবীর সবথেকে বিষাক্ত প্রাণী হল বক্স জেলিফিশ
জেলিফিশ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *