সাইটোকাইনিন কি? বৈশিষ্ট্য ও কাজ

সাইটোকাইনিন হলো কোষ বিভাজন কালে কোষের কোষপ্রাচীর তৈরিতে সাহায্যকারী হরমোন।

1955 খ্রিস্টাব্দে মিলার ও সহকর্মীবৃন্দ (Miller et all) হেরিং মাছের শুক্রানুর DNA থেকে কোষ বিভাজনের সক্রিয় পদার্থের উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন এবং তারা এই সক্রিয় পদার্থটিকে কাইনেটিন (Kinetin) নামে উল্লেখ করেন।

পরবর্তীতে ল্যাথাম (Letham, 1963)  অপরিণত ভুট্টা বীজ থেকে জিয়াটিন নামক আর একপ্রকার কাইনেটিন আবিষ্কার করেন।

তবে 1965 খ্রিস্টাব্দে স্কুগ, স্ট্রংমিলার কোষ বিভাজনকারী সমস্ত হরমোনকে সাইটোকাইনিন নামে অভিহিত করেন, কারণ এই যৌগগুলি কোষ বিভাজনের সাইটোকাইনেসিস পর্যায়কে ত্বরান্বিত করে।

সংজ্ঞা (Definition)

উদ্ভিদের ফল ও শস্যে উৎপন্ন পিউরিন জাতীয় নাইট্রোজেন ঘটিত ক্ষারীয় যে জৈব যৌগ মূলত কোষ বিভাজনকে উদ্দীপ্ত করে ও জরারোধে সাহায্য করে তাকে সাইটোকাইনিন বলে।

উৎস

নারকেলের তরল শস্য (অর্থাৎ ডাবের জল), ভুট্টার দানা, অঙ্কুরিত বীজ, পালং শাক, পাইনের চারা গাছ এবং বিভিন্ন ফুল ও ফল ( যেমন – আপেল, আম, কলা, টমেটো ইত্যাদি)।

রাসায়নিক গঠন

সাইটোকাইনিন হল কার্বন হাইড্রোজেন নাইট্রোজেন ও অক্সিজেন নিয়ে গঠিত পিউরিন বর্গ যুক্ত ক্ষারীয় জৈব যৌগ।

এর রাসায়নিক নাম হল 6-ফুরফুরাল অ্যামাইনো পিউরিন (C10H9N5O)।

সাইটোকাইনিন এর রাসায়নিক গঠন
প্রধান সাইটোকাইনিন – ক) কাইনেটিন ও খ) জিয়াটিন -এর রাসায়নিক গঠন

প্রাকৃতিক সাইটোকাইনিন

স্কুগ ও স্ট্রং 1970 খ্রিস্টাব্দে উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত 9 টি প্রাকৃতিক সাইটোকাইনের কথা উল্লেখ করেন।

এগুলোর মধ্যে কয়েকটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য সাইটোকাইনি হল-

  • কাইনেটিন
  • জিয়াটিন
  • ডাইহাইড্রোজিয়াটিন
  • রাইবোসিল জিয়াটিন

কৃত্রিম সাইটোকাইনিন

একাধিক কৃত্রিম রাসায়নিক পদার্থ সাইটোকাইনের মত কাজ করে।  এই সকল পদার্থের মধ্যে অ্যাডিনিন বা ফিনাইল ইউরিয়া বর্গ উপস্থিত থাকে।

কয়েকটি কৃত্রিম সাইটোকাইনিন হল-

  • 6- বেঞ্জাইল অ্যামাইনো পিউরিন
  • বেঞ্জিমিডাজোল
  • অ্যাজাকাইনেটিন
  • ইমিডাজোল

সাইটোকাইনিন এর বৈশিষ্ট্য

  1. সাইটোকাইনি কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন নিয়ে গঠিত পিউরিন বর্গ যুক্ত ক্ষারীয় হরমোন।
  2. এই হরমোনের (কাইনেটিন) রাসায়নিক নাম 6-ফুরফুরাল অ্যামাইনো পিউরিন।
  3. উদ্ভিদের বীজের শস্যে এবং ফলে এটি অধিক মাত্রায় সঞ্চিত হয়।
  4. সাইটোকাইনিন জলে দ্রবণীয় এবং ব্যাপন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিবাহিত হতে পারে।
  5. এটি ঊর্ধ্বমুখী ও নিম্নমুখী পরিবহনে সক্ষম।

সাইটোকাইনিন এর কাজ

1. কোষ বিভাজন

কোষ বিভাজনে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল কোষ বিভাজনে সাহায্য করা। উদ্ভিদ কোষের সাইটোকাইনেসিসে, অর্থাৎ সাইটোপ্লাজমের বিভাজন ঘটায় এই হরমোন।

গুটম্যান (1956) এবং ফোরে (1961) পিঁয়াজ ও মটরের মূলে এই হরমোন প্রয়োগ করে কোষ বিভাজন ঘটান। 

স্বল্প মাত্রার সাইটোকাইনের সহযোগে অধিক পরিমাণ অক্সিন প্রয়োগ করলে মাইটোসিস কোষ বিভাজন ত্বরান্বিত হয়।

2. কোষের বৃদ্ধি

মূল অথবা অসবুজ পাতায় এই হরমোন প্রয়োগ করলে কোষের বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয়। এছাড়াও এই হরমোন অক্সিন এর সহায়তায় কোষ চক্রের S দশায় DNA র সংশ্লেষে সাহায্য করে এবং যার পরনায় কোষের বৃদ্ধির হার অধিক হয়।

3. বার্ধক্য বিলম্বিতকরণ

সাইটোকাইনিন উদ্ভিদ অঙ্গে ক্লোরোফিল ও প্রোটিনের বিশ্লেষণ বিলম্বিত করে। যার কারণে পাতা, ফল ও অন্যান্য উদ্ভিদ অঙ্গের বার্ধক্যের বিলম্বতা দেখা দেয়।

রিজমন্ড এবং ল্যাং (1967) একটি পরীক্ষা মাধ্যমে দেখান যে উদ্ভিদ দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন কোন পাতায় সাইটোকাইনিন হরমোন প্রয়োগ করলে পাতাটির প্রোটিন এবং ক্লোরোফিল দেরিতে বিনষ্ট হয়, অর্থাৎ পাতাটির বার্ধক্য বিলম্বিত হয়। সাইটোকাইনিন প্রয়োগে পাতার বার্ধক্য বিলম্বিত (পত্র মোচন রোধ) হওয়ার ঘটনাকে রিজমন্ড-ল্যাং প্রভাব (Richmond-Lang effect) বলা হয়।

বার্ধক্য বিলম্বিতকরণ - সাইটোকাইনিন
বার্ধক্য বিলম্বিতকরণ

4. অঙ্গের বিকাশ

এই হরমোন বিটপের অঙ্গবিকাশ ঘটিয়ে মুকুলে সৃষ্টি করে। এছাড়াও উদ্ভিদের ট্রাকিড সৃষ্টিতে, প্রো-প্লাস্টিড থেকে প্লাস্টিড প্রস্তুতিতেও এই হরমোন সহায়তা করে।

বেশি মাত্রায় সাইটোকাইনের সঙ্গে অল্প পরিমাণ অক্সিন মুকুল সৃষ্টিকে ত্বরান্বিত করে, বিপরীত কার্য করলে মূলের বৃদ্ধি প্রভাবিত হয়।

5. পার্শ্বীয় মুকুলের বৃদ্ধি ও অগ্রস্ত প্রকটতা রোধ

সাইটোকাইনিন উদ্ভিদের পার্শ্বীয় মুকুলের বৃদ্ধি ঘটায় এবং অগ্র মুকুলের বৃদ্ধি ব্যাহত করে। অর্থাৎ অগ্রস্থ প্রকটতা রোধ করে। ফলে অসংখ্য শাখা-প্রশাখা সৃষ্টির হয় এবং উদ্ভিদটি ঝোপের মতো আকৃতি লাভ করে।

6. বীজের সুপ্তদশা ভঙ্গ

জিব্বেরেলিন এর মতোই সাইটোকাইনিন বীজের সুপ্তাবস্থা  ভঙ্গ করে।

তামাক (Tobacco), লেটুস (Lettuce), জান্তিয়াম (Xanthium), প্রভৃতি বীজে এই হরমোন প্রয়োগ করলে বীজগুলির সুপ্ত দশা বিনষ্ট হয় এবং বীজের অঙ্কুরোদগম ঘটে (Khan, 1964)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *