অসম্পূর্ণ প্রকটতা (Incomplete dominance) হল মেন্ডেলের সূত্রের একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা। এই ঘটনাটি বিজ্ঞানী কার্ল কোরেন্স সন্ধ্যামালতী বা Mirabilis jalapa (4 ‘O’ clock plant নামে পরিচিত) উদ্ভিদে প্রথম আবিষ্কার করেন।
মেন্ডেলের একসংকর এবং দ্বিসংকর জনন পরীক্ষায় দেখা গেছে যে সংকরায়নের ফলে হেটারোজাইগাস বা সংকর অবস্থায় সর্বদাই প্রকট বৈশিষ্ট্য প্রকাশিত হয়। কিন্তু অসম্পূর্ণ প্রকটকতার ক্ষেত্রে এই ধর্ম লঙ্ঘিত হয় এবং তার পরিবর্তে কোন অন্তর্বর্তী বৈশিষ্ট্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটে, ফলে মেন্ডেলের সূত্রের বিচ্যুতি ঘটতে দেখা যায়।
অসম্পূর্ণ প্রকটতার সংজ্ঞা
বিশুদ্ধ ও বিপরীত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন দুটি জীবের সংকরায়নে যখন মিশ্রিত বৈশিষ্ট্য যুক্ত জীবের সৃষ্টি হয় তখন তাকে অসম্পূর্ণ প্রকটতা বলে।
অসম্পূর্ণ প্রকটতার উদাহরণ
অসম্পূর্ণ প্রকটতা বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণীর মধ্যে দেখতে পাওয়া যায়। উদ্ভিদের মধ্যে সন্ধ্যামালতী স্ন্যাপ ড্রাগন এবং প্রাণীদের মধ্যে অন্ডালুসিয়ান মুরগি অসম্পূর্ণ প্রকটতা দেখায়।
অসম্পূর্ণ প্রকটতার পরীক্ষা
এখানে সন্ধ্যা মালতি ফুল গাছের ওপর অসম্পূর্ণ প্রকটতার পরীক্ষাটি দেখানো হল।
সন্ধ্যা মালতী গাছের ফুলের রং সাদা ও লাল হতে পারে। একটি বিশুদ্ধ লাল ফুল যুক্ত (RR) এবং একটি বিশুদ্ধ সাদা ফুলযুক্ত (rr) সন্ধ্যা মালতি গাছের মধ্যে এক সংকর জনন ঘটানো হলে প্রথম অপত্য জনুতে (F1) উৎপন্ন সমস্ত গাছেই লাল বা সাদা ফুলের পরিবর্তে গোলাপি ফুল প্রস্ফুটিত হয়।

ব্যাখ্যা
F1 জনুতে উৎপন্ন সংকর উদ্ভিদে যেহেতু শতকরা 100 ভাগ গোলাপি ফুল সৃষ্টি হয়েছে তাই জনিতৃ জনুর উদ্ভিদের লাল বা সাদা বৈশিষ্ট্য প্রকাশের প্রকটতা ও প্রচ্ছন্নতার সূত্রটি প্রযোজ্য নয়। অর্থাৎ এখানে মেন্ডেলের সূত্রের বিচ্যুতি ঘটে।
এখন F1 উৎপন্ন গোলাপী ফুলযুক্ত সন্ধ্যামালতী গাছের সপরাগ যোগ ঘটালে দ্বিতীয় অপত্য বংশে (F2) লাল, গোলাপি ও সাদা ফুলযুক্ত উদ্ভিদের অনুপাত 1:2:1 হয়। এখানে প্রকটতা ও প্রচ্ছন্নতার সূত্র প্রযোজ্য না হলেও পৃথকী ভবনের সূত্রটি প্রযোজ্য হয়েছে।
মন্তব্য
কোন জিনের একটি অ্যালিল (R) অ্যালিলের (r) ওপর সম্পূর্ণরূপে প্রকট না হলেও প্রথম এবং দ্বিতীয় অপত্য বংশে শতকরা 50 ভাগ উদ্ভিদে জনিতৃ জীবের অন্তর্বর্তী বৈশিষ্ট্যযুক্ত (এখানে গোলাপি) অপত্যের সৃষ্টি হবে।