উত্তর পশ্চিম ভারতে গম উৎপাদন বেশি হয় কেন

ইন্দো-গাঙ্গেয় সমভূমি, ভারতের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম অঞ্চল অর্থাৎ পাঞ্জাব, হরিয়ানাউত্তরপ্রদেশে পশ্চিম অঞ্চল ভারতে মোট গম উৎপাদনের প্রায় 60%-65% গম উৎপাদিত করে থাকে। তাই এটি Wheat Bowl of India নামে পরিচিত। এই অঞ্চল গম চাষে উন্নত হওয়ার কারণ গুলি হল-

1) প্রাকৃতিক পরিবেশ

অঙ্কুরোদগম থেকে শুরু করে ফসল পাকা পর্যন্ত যে আবহাওয়ার প্রয়োজন হয় তা উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতে বর্তমান-

i) উষ্ণতা:

150C – 200 C উষ্ণতা গম চাষের পক্ষে আদর্শ যা উত্তর-পশ্চিম ভারতের গড় উষ্ণতা।

ii) পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত:

গম চাষের জন্য ঘরে 50 থেকে 100 সেমি বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন। এছাড়াও উত্তর পশ্চিম ভারতে পশ্চিমী ঝঞ্ঝার ফলে যে স্বল্প পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয় তা গম চাষে বিশেষ সুবিধা প্রদান করে।

iii) আবহিক অবস্থা:

গম চাষের বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন প্রকার আবহাওয়া ও আর্দ্রতার প্রয়োজন পড়ে। যেমন-

  • গম চাষের প্রাথমিক অবস্থায় আর্দ্র ও শীতল আবহাওয়ার প্রয়োজন। এতে গম বীজের অঙ্কুোদগমের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং চারা বৃদ্ধিতে সহায়তা হয়।
  • গম চাষে দ্বিতীয় অবস্থায়, যখন গাছ থেকে শীষ বের হয়, সেই সময় উষ্ণ ও শুকনো আবহাওয়া প্রয়োজন।
  • গম চাষের তৃতীয় অবস্থায়, সামান্য বৃষ্টিপাত হলে ভালো। এতে গমের শিষ পুষ্টি লাভ করে।
  • গম চাষের চতুর্থ পর্যায়ে, অর্থাৎ গম পাকার সময়ে যথেষ্ট পরিমাণে সূর্যে তাপ প্রয়োজন পড়ে।

উত্তর-পশ্চিম ভারতে এইরকম অনুকূল আবহাওয়া থাকার দরুন গম উৎপাদন ভালো হয়ে থাকে। গম চাষের অনুকূল পরিবেশের কারণে পাঞ্জাবকে Wheat Granary of India বলা হয়।

iv) ভূপ্রকৃতি ও জলসেচ:

গাছের গোড়ায় জল জমে থাকলে গম চাষের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই অতিরিক্ত জল জমি থেকে বের করে দেওয়ার জন্য ভালো জলনিকাশি ব্যবস্থা যুক্ত সামান্য ঢালু জমি গম চাষের পক্ষে আদর্শ।

  • সেই কারণেই শতদ্রু নদীর উপর ভাকরা-নাঙ্গাল পরিকল্পনায় নির্মিত বাঁধের জলধারা থেকে খাল কেটে উত্তর পশ্চিম ভারতে বিশাল অংশে জলসেচ ব্যবস্থা করা হয়েছে।
  • এছাড়াও পাঞ্জাবের সুতলজ ও বিয়াস নদীর সঙ্গমস্থল থেকে নির্মিত ইন্দিরা গান্ধী খাল পাঞ্জাব ও হরিয়ানা মধ্য দিয়ে প্রবাহিত জলসেচ ব্যবস্থার দরুন উত্তর পশ্চিম রাজ্যগুলিতে আবাদি এলাকা এবং গম চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে।

v) মৃত্তিকা:

এ অঞ্চলের সিন্ধু গঙ্গা নদী দ্বারা বাহিত উর্বর দো-আঁশ মাটি, বেলে দো-আঁশ মাটি, হালকা এঁটেল মাটি গম চাষের পক্ষে আদর্শ।

2) অর্থনৈতিক অবস্থা:

গম চাষের জন্য উত্তর-পশ্চিম ভারতে অনুকূল অর্থনৈতিক অবস্থা গুলি হল-

i) সবুজ বিপ্লবের প্রভাব:

ভারতের কৃষিতে সবুজ বিপ্লবের সবচেয়ে ফলদায়ী সুদূরপ্রসার প্রভাব পড়ে গম উৎপাদনে। এই সময়ে 1960 এর থেকে 2010 সালে গম উৎপাদন প্রায় 6 গুন বৃদ্ধি পায়। তাই একে গম বিপ্লব বলা হয়।

ii) সুলভ শ্রমিক:

বর্তমানে যান্ত্রিক উপায়ে গম চাষে শ্রমিক কম লাগলেও বীজ বপন, আগাছা পরিষ্কার, সার ও কীটনাশক প্রয়োগের জন্য সুদক্ষ ও পরিশ্রমী শ্রমিকের প্রয়োজন পড়ে। এই অঞ্চলে শিক্ষিত, দক্ষ এবং আধুনিকমনস্ক শ্রমিকের যোগান আছে।

iii) সরকারি পরিষেবা ও মূলধন:

উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতে গম চাষের উন্নতির জন্য যেমন- উন্নত বীজের ব্যবহার, সার, কীটনাশক, ও উন্নত কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার ও উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা, কৃষি ঋণ, শস্যবীমার সুবিধা প্রদান প্রভৃতি উন্নতি সাধনের উদ্দেশ্যে ভারত সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

iv) চাহিদা ও বাজার:

বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, সাউথ কোরিয়া, নেপাল প্রভৃতি দেশ ছাড়াও সারা ভারতবর্ষ ও উত্তর পূর্ব ভারত গমের বিপুল চাহিদা থাকার দরুন ভারতের বাহ্যিক বাজারের সাথে সাথে অভ্যন্তরীণ বাজারও যথেষ্ট ভালো।

পাঞ্জাব - হরিয়ানা - উত্তরপ্রদেশ - উত্তর পশ্চিম ভারতে গম উৎপাদন বেশি হয় কেন
উত্তর পশ্চিম ভারতে (পাঞ্জাব – হরিয়ানা – উত্তরপ্রদেশ)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *