ভারতের শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে কমিউনিস্টরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল, যার ফলশ্রুতি হিসাবে শ্রমিক আন্দোলন একটি নতুন মাত্রা লাভ করে। আর এই শ্রমিক আন্দোলনের স্বার্থে কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন গড়ে উঠতে থাকে। এমনই একটি সংগঠন হলো ওয়ার্কস অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি।
গঠন
১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে ১লা নভেম্বর ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের অন্তর্গত লেবার স্বরাজ পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরের বছর ফেব্রুয়ারি মাসে এই নাম বদলে ওয়ার্কস অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি রাখা হয় (Workers and Peasants Party)।
নেতৃবর্গ
হেমন্ত কুমার সরকার, কুতুব উদ্দিন আহমেদ, কবি কাজী নজরুল ইসলাম, এস এ ডাঙ্গে, মুজাফফর আহমেদ, পি সি যোশী, মোহন সিং যশ প্রমুখ নেতৃবর্গের মাধ্যমে দলটি গঠিত হয়। প্রথম প্রেসিডেন্ট ছিলেন নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত। তবে এই দলের জনপ্রিয় সম্পাদক ছিলেন মুজাফফর আহমেদ।
উদ্দেশ্য
১)কংগ্রেসের মধ্যে বামপন্থী শক্তিরূপে সক্রিয়ভাবে কাজ করা।
২) শ্রমিক ও কৃষকের মধ্যে চেতনা ও ঐক্যবোধ জাগ্রত করা।
৩) এই দলকে ক্রমশ জনগণের দলে পরিবর্তিত করা।
৪) প্রাদেশিক ও জাতীয় স্তরে সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করা।
কর্মকাণ্ড
ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে সংগঠকদের নির্দেশ দেওয়া হয় ওয়ার্কস অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টির মাধ্যমে প্রকাশ্যে দলীয় কাজ চালাতে। এরপরই বাংলা ছাড়াও বোম্বাই মাদ্রাস যুক্ত প্রদেশে এই দলের প্রাদেশিক শাখা গড়ে ওঠে। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে এই দলের প্রাদেশিক শাখা গুলি জোটবদ্ধ হয়ে সারা ভারত ওয়ার্কস অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি গঠন করে। সাইমন কমিশন বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময়ে বোম্বাই ও কলকাতায় এই সংগঠনের উদ্যেগে ধর্মঘট হয়। এরপর ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে একই সঙ্গে দুটি ঘটনা ঘটে। একদিকে আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট সংগঠনের পক্ষ থেকে কমিউনিস্টদের ওয়ার্কস অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টির সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করতে বলা হয়। অন্যদিকে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় ভারতীয় কমিউনিস্টদের অনেককে গ্রেফতার করা হয়। এই পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত সংগঠনটি বিলুপ্ত হয়।
উপসংহার
উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা চলে ভারতীয় শ্রমিকরা তাদের অর্থনৈতিক দাবি ছাড়াও স্বাধীনতার আশাতে এই সংগঠনে যুক্ত হয়। কারণ তারা জানত স্বাধীনতা তাদের দুঃখ দূর করতে সক্ষম। তাই স্বাভাবিকভাবে এই দলের গুরুত্ব কে অস্বীকার করা যায় না।